Comments Off on গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ-যেভাবে পেঁয়াজ চাষ করবেন
গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ পদ্ধতি

বর্তমানে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। তবে আমার বিশ্বাস, শুধু গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে ঘাটতিকালীন সময়ে যোগান দেওয়া যাবে না। ভারত বিশ্বে ২য় পেঁয়াজ উৎপাদনকালীন দেশ হওয়া সত্ত্বেও অক্টোবর, নভেম্বর মাসে পেঁয়াজের ব্যাপক ঘাটতি থাকে। ভারতে মোট উৎপাদনের মোট ২০% পেঁয়াজ গ্রীষ্মকালে আবাদ হয়। আর আমাদের দেশে আবাদ হয় ০.০১%

গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের সমস্যা

১। বারি কর্তৃক উদ্ভাবিত গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের বীজ চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল (বছরে প্রায় ৬০০-৭০০ কেজি)। ২। বীজতলায় চারা উৎপাদন অনেক জটিল এবং প্রযুক্তি নির্ভর। ৩। অত্যধিক তাপমাত্রা এবং বর্ষায় চারার মৃত্যুহার অনেক বেশি। ৪। বর্ষাকালে পোকামাকড় এবং রোগবালাইয়ের উপদ্রব বেশি। ৫। ফসল কর্তনের পর কিউরিং এবং শুকানো জটিল। ৬। অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। ৭। ফসল কর্তনের পর সংরক্ষনে করা যায় না। ৮। উচু জমির স্বল্পতা। বন্যায় সম্পূর্ন পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

অতি সংক্ষেপে উন্নত পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদের কয়েকটি পয়েন্ট।

সঠিক এবং ভালো বীজঃ স্বল্পজীবি এবং গাঢ় লাল রঙ্গের গ্রীষ্মকালীন বীজ সংগ্রহ করতে হবে (বারি পেঁয়াজ-৫ জাতটি মোটামুটি ভালো)।

পেঁয়াজের বীজ বপনের সময় ও নিয়ম

আগাম ও লেট এই দুই সময়ে বীজ লাগানো যায়। ফেব্রুয়ারী- মার্চে বীজ বপন করে ৪০-৪৫ দিনের চারা মার্চ- এপ্রিল মাসে এবং জুন-জুলাই মাসে বপন করে আগষ্ট- সেপ্টম্বর মাসে ৪৫ দিনের চারা লাগাতে হবে

পেঁয়াজের বীজ শোধণের উপায়

এক কেজি বীজে ২-৩ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম বা বেভিষ্টিন দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।

বীজতলা তৈরীঃ

গুরুত্বপূর্ণ চারা উৎপাদনের কাজটি অনেক গুরুত্ব দিয়ে এবং দক্ষতার সাথে করতে হবে। ভালো মানের চারা উৎপাদন হলো গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদনের মূল চেলেন্জ। তাই পেঁয়াজের বীজতলা তৈরিতে আপনাকে খুব মনোযোগী হতে হবে।

৫০% শেড নেট বা পলি টানেলের ভিতর মাটি মিহি করে শোধণের পর ১ বাই ৩ মিটার বেড তৈরী করে ২৫-৩০ গ্রাম বীজ বপন করতে হবে।

(বীজের হারঃ ৬০০-৭০০ গ্রাম বীজ দরকার হয় প্রতি বিঘায়।)

পেঁয়াজ চাষের জন্য জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ

BBF(Broad Based Farrow) পদ্ধতিতে অর্থাৎ সমতল মাটি হতে ৬ ইঞ্চি উচু করে বেড বানাতে হবে। (আবশ্যক)। এতে ফিউজিরিয়াম এবং কোলিটোট্রিকাম জনিত রোগ কম হয়।

ড্রিপ ইরিগেশন বা স্প্রিং কুলার পদ্ধতিতে সেচ প্রয়োগ করলে ৪০-৫০% পানি কম লাগে ( সম্ভব হলে)।

বারি কর্তৃক অনুমোদিত মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে।

৪০-৪৫ দিনের চারা মুল জমিতে রোপনের পর পরই সেচ দিয়ে দিতে হবে।

পেঁয়াজের পোকামাকড় ও রোগবালাই দমণ

পেঁয়াজের রোগগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো- থ্রিপস পোকার আক্রমণ। থ্রিপস পোকা দমণের জন্য ইমিডাক্লোরোপিড গ্রুপের যে কোন একটি ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন (তবে ভালো হয় যদি আপনার কাছে থাকে ……..)। এছাড়া অন্যটি হলো- পার্পল ব্লোচ ছত্রাক রোগ, এটি দমণের জন্য আপনি রোভরাল অনুমোদিত মাত্রায় ১৫ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।

কিউরিং

জীবনচক্রের ১০২ দিন পর পেঁয়াজের শল্ক কান্দের সেল্ফ লাইফ বৃদ্ধির জন্য ১০ দিন কিউরিং করা প্রয়োজন। তবে বৃষ্টিপাত এবং আর্দ্রতা বেশি থাকায় সচরাচর কিউরিং সম্ভব হয় না।

গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের ফলনের পরিমাণ

উত্তম ব্যবস্থাপনায় (বারি পেঁয়াজ-৫) বিঘা প্রতি ৫০-৫৫ মন পেঁয়াজের ফলন হতে পারে।

লেখক

কৃষিবীদ মো: শফিকুল ইসলাম

সাঁথিয়া পাবনা।

0

TOP

X