বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সবজি টমেটো। টমেটো বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে যেমন, তরকারি সালাদ, স্যুপ, চাটনি, সস। টমেটো উৎপাদনে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো রোগবালাই। টমেটো রোগগুলো নিয়ন্তনে রাখতে পারলে ফলন অনেক বৃদ্ধিপাবে।
তবে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করলে টমেটোর গাছে রোগ বালাই হয়না বললেই চলে। টমেটোর রোগ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
গোড়া ও মূল পচা (Damping off and root rot)
পিথিয়াম, রাইজোকটোনিয়া, ফাইটোপথোরা, ক্লেরোশিয়াম (Phythium, Rhi“otocnia, Phytophthora, Sclerotium etc.) ও অন্যান্য মাটিবাহিত ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগটি হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার:
টমেটো ক্ষেত্রের মাটি যদি সব সময় স্যাঁতস্যাঁতে থাকে ও ক্রমাগত মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া বিরাজ করলে এবং বায়ু চলাচলে বিঘ্ন ঘটলে এ রোগের আক্রমণের আশঙ্কা বেশি। এটি একটি মারাত্মক রোগ। বীজে আক্রমণ হলে বীজ পচে যায়। বীজ অংকুরোদগমের পরেই প্রাথমিক পর্যায়ে চারা মারা যায় একে প্রিইমারজেন্স ড্যাম্পিং অফ বলে। পোস্ট-ইমারজেন্স ড্যাম্পিং অফের বেলায় চারার হাইপোকোটাইলের কর্টিক্যাল কোষ দ্রুত কুঁচকে যায় ও কালো হয়ে যায়।
চারার কান্ড- মাটির কাছাকাছি পচে চিকন হয়ে যায়। কাণ্ডের গায়ে ছত্রাকের উপস্থিতি দেখা যায়। বীজ শোধন করে বীজ বপন করতে হবে; বীজ ৫২০ঈ তাপমাত্রায় গরম পানিতে ৩০ মিনিট রেখে শোধন করে নিয়ে বপন করতে হবে; রোগের আক্রমণ দেখা দিলে ব্যভিস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম অথবা কিউপ্রাভিট প্রতি লিটার পানিতে ৪ গ্রাম হিসাবে মিশিয়ে চারার গোড়ায় দিতে হবে।
-
বায়ো-বিটিকে জৈব বালাইনাশক Bio-BTK Organic pesticidesProduct on sale140.00৳ – 1,950.00৳
-
ইকোম্যাক ১.৮ ইসি জৈব বালাইনাশক Ecomac Organic pesticidesProduct on sale115.00৳ – 1,650.00৳
-
ফলন বৃদ্ধিকারক ফ্লোরা-Flora (নাইট্রোবেনজিন ২০% ডব্লিউ/ ডব্লিউ)Product on sale80.00৳ – 1,050.00৳
-
বায়োডার্মা পাউডার ট্রাইকোডার্মা সমৃদ্ধ Bioderma PowderProduct on sale120.00৳ – 820.00৳
গাছ বা পাতা কুঁকড়ানো (Leaf curl) :

এটি ভাইরাস জনিত রোগ। পাতা কুঁকড়ানো রোগের তিনটা কারনে হয়ে থাকে। যদি গাছে মাকর ও থ্রিপস্ পোকা থাকে তাহলে গাছ কুকরে যায় মটিতে এবং জিং এর ঘাটতি থাকে তখন এটা বেশি দেখা যায়। পাতার কিনার থেকে শিরার দিকে কুঁকড়িয়ে যায়। পাতা খসখসে হয় এবং হলুদ হয়ে যায়, এতে করে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
প্রতিকার:
রোগ প্রতিরোধ জাতের চারা লাগাতে হবে। আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। গাছ রুপনের ১৫ দিন পর থেকেই আট দিন পর পর ভার্টিমেক ও কনফিডর মিস্কার করে স্পে করতে হবে। জিং যদি চাষে দেন তা হলে চারা লাগানোর এক মাস পর থেকে ১৫ দিন পর পর একবার মিমজিং গোল্ড স্পে করতে হবে।
ঢলে পড়া (Bacterial wilt):
ডলে পড়া রোগটি টমেটো, মরিজ ও বেগুন জাতিয় ফসলের জাতিগত রোগ। অনেকে বলে থাকেন এই রুগের সমাধান নাই, কিন্তু এই রোগের সমাধান আছে, প্রাথমিক অবস্থায় বিজ শোধন করে নিতে হবে। জমির মাটি শোধন করে নিতে হবে। অনেকেই জানেন না বীজ শোধন কিভাবে করতে হয়। বীজ অডুস্টিন মিস্কার পানিতে দুই ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে বিজ শোধন হয়ে যাবে। মাটি শোধন করার জন্য সাধারনত ডলু চুন প্রতি বিঘায় ৯৯ কেজি দিতে হয়।
যেটা একবার দিলে তিন বছর আর লাগেনা। আবার অনেকেই ব্লেসিং পাউটার দিয়ে ও মাটি শোধন করেন, প্রতি বিঘায় দুই কেজি করে দিয়ে। এর পরে ও যদি ডলে পরা আসে ব্যাকট্রাপ অথবা নির্ভয় গাছের গোরায় দিলে এটা থেকে পরিত্তান পাবেন। আরেকটা কারনে ডলে পরা আসে যেটা মাটিতে যদি কেচেঁ বেশি থাকে সে ক্ষেত্রে ভিটাপুরান অথবা কার্বুটাপ দিতে হবে, এক মাস পর পর মাটিতে নিরানির দেবার সময় ইনশাআল্লাহ এই সমস্যা থেকে পরিত্তান পাবেন।
বিজের গাছের তুলনায় গ্রাফটিং গাছে ডলে পরা খুবই কম আসে। বিজের গাছ মাত্র তিন মাসে শেষ তবে গাছ যদি সুস্থ থাকে গ্রাফটিং গাছ সাত মাস ফল দিতে সক্ষম হয়।
নাবি ধসা (Late blight) :
এটি একটি ছত্রাক জনিত রোগ। এ রোগটি গাছের আক্রান্ত অংশ, বীজ, মাটি ও পানি দ্বারা বিস্তার লাভ করে। এ রোগের আক্রমণে হলে টমেটো গাছের পাতায় বিভিন্ন আকারের ভেজা বাদামি বর্ণের দাগ পড়ে। দাগগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। একটা সময়েগাছের পাতা পচে যায়। শুষ্ক ও আর্দ্র আবহাওয়ায় পাতার পচন দ্রুত বিস্তার লাভ করে। এ রোগের আক্রমনের কয়েক দিনের মধ্যে গাছ মারা যায়।

প্রথমে ফলের উপরিভাগে ধূসর সবুজ, পানি ভেজা দাগের আবির্ভাব হয়। ক্রমশ সে দাগ বেড়ে ফলের প্রায় অর্ধাংশ ছড়িয়ে পড়ে এবং আক্রান্ত অংশ বাদামি হয়ে যায় এবং ধূসর বর্ণের দাগ পড়ে।
প্রতিকার:
এ রোগ দেখা দিলে ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। নীরোগ বীজ ব্যবহার করে চারা তৈরি করতে হবে। শস্য পর্যায় অনুসরণ করতে হবে। রোগের লক্ষণ দেখার সঙ্গে সঙ্গে একরোবেট এমজেড (ম্যানকোজেব+ডাইমেথোমরফ্) ০৪গ্রাম/লিটার বা হেডলাইন টিম (পাইরাক্লস্ট্রাবিন+ডাইমেথোমরফ্) ২.৫০গ্রাম/লিটার বা হেমেনকোজেব বা রিডোমিল গোল্ড বা ইন্ডোফিল এম-৪৫ বা ডায়থেন এম-৪৫ প্রভৃতি ০৪গ্রাম/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।
একজন কৃষক টমেটোর রোগ ও তার প্রতিকার ভালোভাবে জেনে টমেটো চাষ করলে সফল হবেন।