Comments Off on ওলকপি চাষ পদ্ধতি
ওলকপি চাষ পদ্ধতি

খুবই অদ্ভুত একটি সবজি হচ্ছে ওলকপি। কেননা অন্যান্য সবজির কোনটার শেকড় ফুলে মোটা হয়ে সবজি হয়, আবার কোনটার নিষিক্ত ডিম্বানু ফুলে ফল হয়। কিন্তু এ ওলকপির গাছটাই ফুলে টইটুম্বুর হয়ে সবজি হয়। দেখতে ঠিক গোপালভাড়ের ভুড়ির চেয়ে কম নয়। এ সবজিটার আরো একটি বিষয় আমার খুব পছন্দ, সেটা হলো সর্বোচ্চ ৪০-৫০ দিনেই এর ক্ষেত পরিষ্কার। খুব কম সময়ে এবং কম পরিশ্রমে এটির ফলন হয়ে যায়। 

যে কোন অলস ব্যক্তিও এটি সহজে সল্প পরিমান চাষাবাদ করে নিজের পরিবারের চাহিদা মেটাতে পারে। এটি ফুলকপি ও বাধাকপির মতো একটি জনপ্রিয় শীতকালীন সবজি হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা মোটামুটি ভালোই থাকে। আসুন জেনেনেই  ওলকপি চাষের সঠিক পদ্ধতি।

ওলকপি চাষের মৌসুম

এটা শীত মৌসুমের ফুল কপি বা বাধাকপি জাতীয় একটি সবজি। 

ওলকপির জাত

সাধারনত দুই ধরনের ওলকপি দেখা যায়। সবুজ ও বেগুনি। বিভিন্ন কোম্পানি থেকে হাইব্রিড ওলকপির বীজ পাওয়া যায়। ভাদ্র থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত বীজ বপন করা হয়। তবে ছোট আকারে বাড়ির জন্য চাষাবাদ করলে নার্সারী থেকে দেশি চারা নিয়ে রোপন করা যায়। এতে পরিশ্রম কম হবে।

জমি তৈরী ও সার প্রয়োগ

সাধারণত এটেল বা এটেল-দোআশ মাটিতে এর ফলন ভালো হয়। এছাড়াও দোআশ মাটিতেও এর চাষাবাদ করা হয়। কয়েকটি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরী করতে হবে। শতক প্রতি ১ কেজী ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ৫০০ গ্রাম পটাশ, ৭০০ গ্রাম জিপসাম এবং জিংক ও বোরন সার সামান্য পরিমান দেয়া যায়। গোবর আর টিএসপি সার চাষের সময় দিতে হবে। অর্ধেক পটাশ সার চাষের সময় আর বাকিগুলো চারা রোপনের ১৫-২০ দিন পর পর ২ কিস্তিতে দিতে হবে।

চারা রোপন পদ্ধতি

৫-৬ টি পাতা হলে চারা রোপনের উপযুক্ত হবে। চারা রোপনের সময় সারি থেকে সারির দুরত্ব ১২ ইঞ্চি বা ১ ফুট আর চারা থেকে চারা ৯ ইঞ্চি দুরত্বে লাগাতে হবে। 

ওলকপির পরিচর্যা

নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার ও সার প্রয়োগ করতে হবে। এ ফসলে বেশি পানির প্রয়োজন হয়, তাই নিয়মিত সেচ দিতে হবে। পাখি বসার জন্য ডাল পুতে দেয়া যেতে পারে। এতে পোকা-মাকড়ের উপদ্রব কম হবে।

পোকা মাকড়

ওলকপি চাষে তেমন পোকা-মাকড় দেখা যায় না, তবে লেদা পোকা, ঘোড়া পোকা ও জাব পোকা এবং করাত মাছি বেশি দেখা যায়। এর জন্য সাইপারমেথ্রিন বা এমামেকটিন বেনজয়েডের সাথে ইমিডাক্লোরপ্রিড মিক্স করে স্প্রেয়ার দিয়ে স্প্রে করলে সব পোকা মারা পড়বে।

ওলকপির রোগ বালাই

ওল কপির পাতায় দাগ রোগ, চারা ধ্বসা, ক্লাবচরূট, মোজাইক ভাইরাস, পাতার আগা পোড়া ইত্যাদি রোগ হতে পারে। সময়মতো পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ, নিয়মিত সেচ ও কীটনাষক, ছত্রাকনাষক স্প্রে এবং সঠিক পরিচর্যা এসকল রোগ থেকে দুরে রাখবে। 

ফলন সংগ্রহ

স্বল্প পরিশ্রম ও কম খরচে এর ভালো ফলন পাওয়া যায়। ৪০-৫০ দিন পর থেকেই কচি অবস্থায় ফলন সংগ্রহ করতে হবে। বয়স বেশি হয়ে গেলে আশ হয়ে যাবে এবং বাজার মূল্য কমে যাবে। সাধারণত দেশি জাতে শতক প্রতি ১০০ থেকে ১২০ কেজী ফলন হয়। হেক্টরে ২৫-৩০ টন ফলন হয়। হাইব্রিড জাতগুলোতে হেক্টরে ৫০-৬০ টন ফলন পাওয়া সম্ভব।

লেখক

মোঃ মহিউদ্দিন অনিক

রাজশাহী

0

TOP

X