বাংলাদেশে করলা একটি অন্যতম গ্রীষ্মকালীন প্রধান সবজি। ইংরেজিতে একে Balsam pear,bitter gourd, alligator pear, bitter cucumber, bitter melon ইত্যাদি বলা হয়। স্বাদের দিক থেকে তিক্ত হলেও সকলের কাছে করলা প্রিয় একটি সবজি হিসাবে পরিচিত। করলায় প্রচুর পরিমাণে আয়রণ, বিটা ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, কমপ্লেক্স এবং
ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম,ফলিক এসিড, জিংক ও ফসফরাস রয়েছে। আসুন জেনে নিই করলা চাষ পদ্ধতি।
করলার জাতসমূহ
বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি উচ্চ ফলনশীল করলার জাত রয়েছে। এসকল জাতের মধ্যে বারি করলা-১ এবং বিএডিসির গজ করলা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বিভিন্ন রকমের হাইব্রিড জাত আছে।
-
Product on saleজননী ৫৫ হাইব্রিড ভুট্টা Janani 55 hybrid maize ( ১ কেজি)750.00৳
-
Product on saleহাইব্রিড টমেটো তাজ ১৩ Hybrid Tomato Taj 13 (২ গ্রাম)1,350.00৳
-
Product on saleহাইব্রিড মরিচ পিকনিক Hybrid Chilli Picnic (৫ গ্রাম)450.00৳
-
Product on saleহাইব্রিড পেঁপে সুইটি Hybrid Papaya Sweety (১ গ্রাম)420.00৳
জমি তৈরি ও বপন পদ্ধতি
জমিতে ৪ থেকে ৫ টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ভালো ভাবে ঝুরঝুরা করে করলার জন্য জমি প্রস্তুত করে নিতে হবে। মই দিয়ে জমি সমান করার পর বেড অথবা মাদা তৈরি করে নিতে হবে। বেড তৈরির জন্য ১ মিটার চওড়া, বেড থেকে বেডের মাঝে ৩০ সেমি চওড়া করে নালা কাটতে হবে। জমির লম্বার সমান করে বেড লম্বা করে তৈরি করে নিতে হবে। জমি যদি অনেক বেশি লম্বা হয় তাহলে জমি খন্ড করা যেতে পারে।করলার জন্য বেডে ৫ ফুট পরপর ১ ফুট গভীরতা ও ২ ফুট চওড়া করে মাদা তৈরি করে নিতে হবে।
মাটি ও জলবায়ু
পানি জমেনা এমন জায়গায় করলার চাষ করতে হবে। বাংলাদেশের সব জেলাতেই সব রকমের মাটিতে করলা চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থযুক্ত দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে করলা সবথেকে বেশি উপযোগী। বাংলাদেশের আবহাওয়া করলা চাষের জন্য উপযোগী। উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়াতে করলা ভালো জন্মে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে করলার পরাগায়ন বিঘ্নিত হয়ে থাকে।
বীজের পরিমাণ ও বপনের সময়
করলা চাষের জন্য সাধারণত প্রতি শতকে ১৫-২০ গ্রাম এবং প্রতি হেক্টরে ৩-৪ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়ে থাকে। করলা চাষের জন্য বীজ বপনের সঠিক সময় হলো ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পযর্ন্ত।
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
বীজ বপনের ৭ থেকে ১০ দিন আগে প্রতিটি মাদায়
- পুরাতন গবর ৫ কেজি
- ৫০ গ্রাম টি এস পি
- ৬০ পটাস
- ২৫ গ্রাম জিপসাম
- ৫ গ্রাম বোরন সার
মাদার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। ৫ গ্রাম জিংক ৩ দিন পর মাদায় ছাই এর সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। মাদায় বীজ সরাসরি (৪০*৪০*৪০ সেমি) বপন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিটি মাদায় কমপক্ষে ২টি করে বীজ বপন করতে হবে। অথবা পলিব্যাগে উৎপাদিত ১৫-২০ দিন বয়সের চারা রোপন করতে হবে। চারার বয়স ১০ দিন হলেই মাটির চটা ভেংগে ২৫ গ্রাম মোট সার পটাস + ইউরিয়া। ২ গ্রাম সালফার ডি এফ মাদায় ছিটিয়ে দিতে হবে গাছের গুড়া হতে ৫/৬ ইঞ্চি দূরে। এর পর দিন সেচ দিতে হবে। ২০ দিন হলেই আবার সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে একই পরিমাণে।
সেচ ও পানি নিষ্কাশন
করলার জমিতে রসের অভাব হলে সাথে সাথে দুই বেডের মাঝখানের নালায়ি সেচ দিয়ে দিতে হবে। বৃষ্টিপাতের কারণে যদি জমিতে পানি জমে থাকে তা হলে সাথে সাথে দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
করলা গাছের পরিচর্যা
করলা গাছ বড় না হওয়া পযর্ন্ত আগাছা পরিস্কার করতে হবে। প্রতি মাদায় ২টি করে গাছ রেখে অতিরিক্ত গাছগুলো তুলে নিতে হবে। যখন করলা গাছ লম্বায় ১০-১৫ সেমি হবে তখন গাছের গোড়ার কাছাকাছি মাটিতে কাঠি পুঁতে একদিতে কাত করে বেধেঁ দিতে হবে। এছাড়া নিড়ানি দিয়ে মাটি ২০ দিন পর পর আলগা করে দিতে হবে। করলা গাছ যখন ৫০ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হবে তখন ১.৫ মিটার উচুতে মাচা তৈরি করে দিতে হবে। জমির আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য মালচিং করে দিতে হবে।
করলা গাছের রোগ ও প্রতিকার
করলা গাছের তেমন একটা পোকা-মাকড়ের আক্রমন লক্ষ্য করা যায়না। তবে ফলের মাছিপোকা, কাঁঠালে পোকা ও লাল কুমড়া পোকার আক্রমন হতে পারে। করলা গাছের সমস্যা ও তার সমাধান নিচে আলোচনা করা হলো।
ফলের মাছিপোকা
স্ত্রী মাছি পোকা কচি ফলের গায়ে ২-৫টি ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটে কীড়াগুলো আক্রান্ত ফলের ভিতরে ঢুকে ফলের শাঁস খেয়ে ফেলে। আক্রান্ত ফলটি অকালেই ঝড়ে পড়ে।
প্রতিকারঃ সতেজ ফুল ফল গুলো যাতে ফল ছিদ্রকারী মাছি পোকা নষ্ট করতে না পারে সে জন্য ফেরোমন ফাঁদ ঝুলিয়ে দিতে হবে। প্রতি বিঘা জমির জন্য ১২ টা ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া বিশেষ প্রয়োজন হলে সাইফারমেথ্রিন গ্রুপের ঔষধ দিতে হবে ৭ দিন পর পর ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি হারে।
কাঁঠালে পোকা
এ পোকার আক্রমন হলে করলা গাছের পাতার সবুজ অংশ খেয়ে নষ্ট করে দেয়। করলা গাছের আক্রান্ত পাততা বিবর্ণ জালের মতে দেখায়। এবং আক্রান্ত পাতাগুলো ঝড়েপড়ে গাছ পাতা শূণ্য হয়ে যায়।
প্রতিকারঃ করলা গাছের আক্রান্ত পাতা থেকে পোকার ডিম, কীড়া এবং পূর্ণ বয়স্ক পোকাগুলো হাত ও হাতজাল দিয়ে সংগ্রহ করে মেড়েফেলতে হবে। এছাড়া প্রতি লিটার পানিতে ৩০-৪০ গ্রাম শুকনা নিম বীজের পাউডার এক রাত ভিজিয়ে রেখে ওই পানি আক্রান্ত গাছে স্প্রে করে দিতে হবে। আক্রমণ বেশি দেখা দিলে প্রতি লিটার পানির সাথে ১ মিলি হারে ম্যালাথিয়ন ৫৭ইসি ভালোভাবে মিশিয়ে আক্রান্ত গাছের পাতায় স্প্রে করতে হবে।
লাল কুমড়া বিটল
পূর্ণ বয়স্ক একটি পোকা পাতা ও ফল খেয়ে থাকে।
প্রতিকারঃ লাল কুমড়া পোকা দমনের জন্য জমি সবসময় পরিস্কার রাখতে হবে। হাত দিয়ে পোকাগুলো ধরে মেরে ফেলতে হবে। পোকার আক্রমন বেশি হলে সুমিথিয়ন বা ফলিথিয়ন জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ডলে পড়া এবং গোড়া পঁচারোগের জন্য
মেনকোজেব প্লাস মেটালাক্সিল গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে লিটার প্রতি ২ গ্রাম হারে। এ ওষুধ টা ২০ দিন পর পর দিতে হবে। ভেকটাফ ব্যাকটেরিয়া নাশক স্প্রে করতে হবে প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম হারে। এই ঔষদ প্রতিমাসে একবার দিতে হবে।
করলাপাতার গুচ্ছ রোগ ও প্রতিকার
এ রোগ দেখা দিলে করলা গাছের পাতাগুলো গুচ্ছ আকারে দেখা যায়। গাছ বৃদ্ধি হয় না এবং ফুল ও ফল কমে যায়। প্রতিকার হিসাবে আক্রান্ত গাছ দেখা মাত্রই তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। বাহক পোকা দমনের জন্য এডমায়ার বা টিডো নামক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
ফল সংগ্রহ ও ফলন
জমিতে বীজ বপণের ৫০-৬০ দিন পর থেকে গাছে ফল ধরতে শুরু করে। ফল ধরার ১২-১৫ দিন হলে করলা সংগ্রহ করতে হয়। সঠিক ভাবে যত্ন নিলে হেক্টর প্রতি করলার ফলন ১২-১৫ টন হয়ে থাকে।
আমার করলা গাছের পাতা লালচে হয়ে যায় এবং গাছের আগা কাঠির মত হয়ে যায়। এর প্রতিকার কি?