কৈ মাছ আমাদের দেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় মাছ হিসাবে পরিচিত। জীবন্ত অবস্থায় বাজার জাত করা যায় এ কারণে মাছটির বাজারমূল্য তুলনামুলকভাবে বেশি। অতীতে এ মাছটি হাওড়-বাওড়, খাল-বিল, পুকুর-ডোবায় প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত।
বর্তমানে এ মাছটি বিপন্ন প্রজাতির মাছ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। দেশিয় প্রজাতির অত্যান্ত মুল্যবান এ মাছটির বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এখনই এগিয়ে আসতে হবে। নিন্মে কৈ মাছের কৃত্রিম প্রজনন করার কৌশল আলোচনা করা হলো-
ব্রুড মাছের পরিচর্যা
কৈ মাছের কৃত্রিম প্রজননের জন্য প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে, সুস্থ-সবল ও রোগমুক্ত মাছ সংগ্রহ করে, ব্রুড তৈরি করতে হবে। ব্রুড তৈরির জন্য কিছু দিক নিদের্শনা মেনে পুকুর প্রস্তুত ও ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে। নিচে সে বিষয় গুলো আলোচনা করা হলো-
- ব্রুড মাছের পুকুরে পরিমিত চুন, সার ও কম্পোষ্ট দিয়ে প্রস্তুত করে নিতে হবে।
- পুকুরের পানির গড় গভীরতা ১.০ মিটার রাখতে হবে।
- কৈ মাছ প্রতি শতকে ২০০০-৫০০০ পিছ মজুদ করা যাবে।
- প্রতিদিন মাছের দৈহিক ওজনের ৬-১০% সম্পুরক খাবার (৩০-৩৫% প্রোটিন সমৃদ্ধ) প্রয়োগ করতে হবে।
- নিয়মিত জাল টানার মাধ্যমে ব্রুড মাছের স্বাস্থ পরীক্ষা করতে হবে।
-
জার্মিসল এল Germisol L
-
Product on saleঅল অক্সি All OxyOriginal price was: 148.00৳ .115.00৳ Current price is: 115.00৳ .
-
Product on saleBio-C Complex, মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী ভিটামিন বায়ো সি কম্পেলেক্স130.00৳ – 950.00৳
-
Product on saleইন-জাইম প্লাস, মাছ ও চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারক (Fish Disease Preventer)140.00৳ – 950.00৳
প্রজননক্ষম স্ত্রী ও পুরুষ মাছ সনাক্তকরণ
কৈ মাছের প্রজনন ঋতুতে খুব সহজেই স্ত্রী ও পুরুষ নির্বাচন করা যায়।
প্রজনন ঋতুতে পরিপক্ক স্ত্রী ও পুরুষ মাছ নিন্মবর্নিত বৈশিষ্ট্যসমুহ পর্যবেক্ষণে সহজেই আলাদা করা যায়।
- স্ত্রী মাছের গায়ের রং পুরুষ মাছের গায়ের রং থেকে হালকা বাদামী এবং বক্ষ ও শ্রোণী পাখনা উজ্জল বাদামী বর্ণ ধারন করে।
- স্ত্রী মাছের পেট বেশ ফোলা ও নরম হয়, আস্তে চাপ দিলে পরিপক্ক ডিম বেড় হয়ে আসে।
- পেটে হালকা চাপ দিলে জনন ইন্দ্রিয়ের স্ফীতি লক্ষ্য করা যায়।
- পুরুষ মাছের বক্ষ ও শ্রোণী পাখনায় লাল বর্ণ দেখা যায়।
- পেটে হালকা চাপ দিলে সাদা মিল্ট বেরিয়ে আসে।
- স্ত্রী ও পুরুষ মাছে সাধারণত আকারে কোন পার্থক্য দেখা যায়না।
কৈ মাছের প্রজনন শুরু হয় এপ্রিল মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত।
কৈ মাছের কৃত্রিম প্রজনন করার ধাপ সমুহ-
- কৈ মাছ প্রজননের হরমোন ইনজেকশন দেওয়ার ৮-১০ ঘন্টা আগে ব্রুডকৈ মাছ হ্যাচারিতে রাখতে হবে।
- এ সময়ে পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রাখার জন্য হাপায় কৃত্রিম ঝর্ণার প্রবাহ তৈরি করতে হবে।
- পিটুইটারী দ্রবণের ইনজেকশন স্ত্রী ও পুরুষ উভয় মাছকে দিতে হবে।
- প্রতি কেজি পুরুষ মাছের জন্য ৪ মিগ্রা. ও স্ত্রী মাছের জন্য ৮-১০ মিগ্রা পিজি বক্ষ পায়ুপথের নিচে ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হবে।
- কৈ মাছকে পিজি ইনজেকশন দেওয়া হলে পুরুষ ও স্ত্রী মাছ ১:১ অনুপাতে হাপায় রেখে কৃত্রিম ঝর্ণার প্রবাহ দিতে হবে।
- কৈ মাছ হরমোন ইনজেকশন দেয়ার ৬-৭ ঘন্টা পর প্রাকৃতিক প্রজননের মাধ্যমে ডিম দেয়।
- ডিম ছাড়ার পর যত দ্রুত সম্ভব মাছ গুলোকে হাপা থেকে সরিয়ে নিতে হবে।
- ডিম থেকে রেণু পোনা বের হতে ২২-২৪ ঘন্টা সময় লাগে এটা তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে থাকে।
- ডিম থেকে রেণু বের হবার পর ২-৩ দিন হাপাতেই রাখতে হয়।
রেণু পোনার খাবার
ডিম ফোটার ৬০ ঘন্টা পর্যন্ত রেণু পোনাকে কোন খাবার দিতে হয় না কারণ রেণু পোনা কুসুম থলি থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে। ৬০ ঘন্টা অতিবাহিত হবার পর রেণু পোনাকে খাবার হিসাবে সিদ্ধ ডিমের কুসুমের দ্রবণ দিনে চার বার দিতে হবে। একটি ডিমের কুসুম ৫০-৬০ গ্রাম ওজনের ৪০ টি স্ত্রী মাছের রেণুর জন্য যথেষ্ট। এভাবে রেণু পোনাকে ২৪-৩৬ ঘন্টা হাপায় রেখে খাবার দিতে হবে। এ অবস্থায় রেণুকে নার্সারি পুকুরের ব্যবস্থা নিতে হবে।
সতর্কতা: হরমোন প্রয়োগ কৃত মাছ কোন অবস্থাতেই বাজার জাত করা যাবেনা।
কৈ মাছের নার্সারি পুকুর প্রস্তুতি
- কৈ মাছের নার্সারি পুকুরের আয়তন ২০-৪০ শতাংশ হলে ভাল।
- পুকুরের গভীরতা ০.৮০-১.০ মিটার হতে হবে।
- পুকুরের তলদেশ থেকে পঁচা কাদা উঠিয়ে ফেলতে হবে।
- পুকুরের মাটি সূর্যালোকে শুকিয়ে তলদেশ নাঙ্গল দিয়ে চাষ করে নিতে হবে।
- নার্সারি পুকুরের চারদিকে ৩-৪ ফুট নেট দিয়ে বেড়া তৈরি করতে হবে।
- পুকুরে গভির নলকুপের পানি দিতে হবে।
- পুকুরে প্রতি শতাংশে ১.০ কেজি হারে চুন দিতে হবে।
- চুন প্রয়োগের ৩ দিন পর পুকুরে প্রতি শতাংশে ৫ কেজি কম্পোষ্ট সার দিতে হবে।
- পুকুরে কম্পোষ্ট সার প্রয়োগের পর দিন শতক প্রতি ১০০ গ্রাম হারে ময়দা ও ২০০ মিলি হারে চিটা গুড় পানিতে মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে।
- রেণু পোনা মজুদের ২৪ ঘন্টা আগে হাঁস পোকা ও ক্ষতিকর পোকামাকড় নিধন করার জন্য ৮-১০ মিলি মুমিথিয়ন অবশ্যই প্রতি শতাংশে প্রয়োগ করতে হবে।
- প্রস্তুত করা পুকুরে ৪-৫ দিনের রেণু পোনা শতাংশ প্রতি ৫০ গ্রাম মজুদ করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য যে কৈ মাছের নার্সারি পুকুরে রাতের বেলায় প্রায়শ অক্সিজেনের অভাব দেখো যায়। অক্সিজেনের অভাবে পোনার ব্যাপক মৃত্যু হয়ে থাকে। এ কারণে রেণু মজুদের ১ম দিন থেকে ৫ দিন পর্যন্ত রাত্রে অক্সিজেন বৃদ্ধিকারক ক্যামিকেল দ্রব্য ব্যবহার করতে হবে। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী রাত্রের বেলায় অক্সিজেন বৃদ্ধিকারক ক্যামিকেল ব্যবহার করতে হবে।