0
লাম্পি স্কিন ডিজিজ

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের বিভিন্ন জেলাতে গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ।  লক্ষিপুর, শরিয়তপুর, যশোর সহ একাধিক জেলায় ব্যপক হারে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এটি গরুর একটা ভাইরাস জনিত চর্মরোগ, যা খামারির ক্ষতির কারন। এই ভাইরাস জনিত রোগটি আফ্রিকার জাম্বিয়ায় প্রথম দেখা যায়, ১৯২৯ সালে । 

আফ্রিকাতে  এই রোগে গরুর মৃত্য হার ৪০%। আফ্রিকাতে একাধিকবার মহামারি দেখা দিলেও আমাদের দেশে এই রোগের বিস্তার এখনো মহামারি আকারে দেখা যায় নাই। অর্থনৈতিকভাবে একটি খামারকে ধসিয়ে দেওয়ার জন্য খুরা রোগের থেকে বেশি ভয়ংকর হিসাবে ধরা হয়ে থাকে এই রোগকে।

১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে আফ্রিকায় অফিসিয়ালভাবে প্রথম রোগটিকে সনাক্ত করা হয়। এ রোগে আকান্ত হয়ে আফ্রিকায় হাজার হাজার গরু মারা যায় এবং শতশত খামার বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তি সময়ে ঠিক একইভাবে ৭০ দশক এবং ৮০ দশকে  আফ্রিকার প্রায় সব দেশেই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার খামার আবারও বন্ধ হয়ে যায়।

লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের কারণ

সাধারণত  এক প্রকার পক্স ভাইরাস সংক্রমনের মাধ্যমে গবাদি পশুতে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এক গরু থেকে অন্য গরুতে সংক্রমনীত হয়ে থাকে।

রোগের লক্ষণ ও সময়

মূলত বর্ষার শেষে যে সময়ে মশা মাছি ব্যপক হারে বংশবিস্তার করে থাকে সেই সময়ে এ রোগটি প্রানঘাতী আকারে ব্যপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত গরুর শুরু থেকে যে সব লক্ষন দেখা যায়-

১। জ্বর- গরুর প্রথমে জ্বর হয় এবং খাবারে রুচি কমে যায়।

২। লালাক্ষরণ- জ্বরের সাথে মুখ নাক দিয়ে লালা বের হতে থাকে। পা ফুলে যায় সামনের দু পায়ের মাঝখানে পানি জমে যায়।

৩। ক্ষত সৃষ্টি– শরিরে বিভিন্ন জায়গায় চামড়া ফুলে পিন্ড আকার ধারন করে। লোম উঠে যায় এবং ক্ষত সৃষ্টি হয়। এক সময়ে ক্ষত, শরীরের অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।

৪। পুঁজ ও রক্ত– আক্রান্ত পশুর ক্ষত স্থান দিয়ে পুঁজ ও রক্ত বের হয়।

৫। খাবারে অরুচি– মুখের ও পাকস্থলীর সৃষ্ঠ ক্ষতের কারনে গরু খাবার ও পানি পানে অনিহা প্রকাশ করে, খাদ্য গ্রহন কমে যায়।

লাম্পি স্কিন রোগের প্রতিকার ও চিকিৎসা

যে কোন রোগের চিকিৎসার  চেয়ে প্রতিকার অধিক গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে থাকে এবং প্রতিকারের মাধ্যমে অর্থের লোকসান রক্ষা পাওয়া যায়, সে কারণে খামারীর খামারের প্রতি উদাসীনতা দুর হয় আর খামারী বেশি লাভবান হয়।

১। আক্রান্ত গরুকে নিয়মিত LSD ভ্যাকসিন দিতে হবে। যদিও আমাদের দেশে এ রোগের পরিধি কম ছিল (কিন্তু এখন সচারচর) তাই এই রোগের ভ্যাকসিন পাওয়া সহজলভ্য নয়।

২। আক্রান্ত গরুকে আলাদা স্থানে রাখা ও মশারি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে যাতে মশা-মাছি না কামড়ায়।

৩। খামারের ভিতর ও চারপাশ পরিস্কার পরিছন্ন রাখতে হবে, যেন মশা মাছির উপদ্রব নিয়ন্ত্রন করা যায়।

৪। আক্রান্ত খামারের কোন সামগ্রী ব্যবহার এবং যাতায়াত বন্ধ করতে হবে ।

৫। কোন অবস্থাতেই আক্রান্ত গাভির দুধ বাছুরকে খেতে দেওয়া যাবেনা দুধ মাটিতে পুতে রাখতে হবে।

৬। আক্রান্ত গরুর পরিচর্যা করার পর ঐ পোশাকে সুস্থ্য গরুর কাছে যাওয়া যাবে না।

৭। ক্ষতস্থান সবসময় পরিস্কার রাখতে হবে।

যেহেতু বাংলাদেশে এই রোগটিতে আক্রান্তের ঘটনা তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রন্তের লক্ষণ দেখা দিলে রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে। বর্তমানে  আমাদের দেশে এই রোগের ঔষদ পাওয়া যাচ্ছে, গোট পক্স বা শিপ পক্স ভেকসিন দিলে গরু আর আক্রন্ত হবে না ।

লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগকিভাবে ছড়ায়

লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত গরু থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে রোগটি ছড়িয়ে থাকে। এ রোগটি এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ার প্রধান মাধ্যম গুলো হচ্ছে-

  • মশাও মাছি– এই রোগটি মশা ও মাছি প্রধান বাহক হিসাবে কাজ করে থাকে। অন্যান কীটপতঙ্গের মাধমেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
  • লালা– আক্রান্ত গরুর লালা, খাবারের মাধ্যমে অন্য গরুতে অথবা খামারে কাজ করা মানুষের কাপড়ের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ে।
  • দুধ– আক্রান্ত গাভীর দুধে ভাইরাস থাকে, তাই আক্রান্ত গাভীর দুধ খেয়ে বাছুর আক্রান্ত হতে পারে
  • আক্রান্ত ষাঁরের সিমেন– ভাইরাস আক্রান্ত গরুর সিমেন থেকেও অন্য গরুতে আক্রান্ত হতে পারে।
  • মানুষের মাধ্যমে– খামারের কাজের লোকের পেশাকের মাধ্যমে আক্রান্ত গরুর ভাইরাস অন্য গরুতে ছড়াতে পাড়ে।

Leave a Comment

Your email address will not be published.

0

TOP

X