শিমের ইংরেজি নাম Bean, আমাদের দেশে শিম শীতকালিন সবজি হিসাবে খুবই জনপ্রিয়। শীত মৌসুমের শুরুর দিকে উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে দাম বেশি থাকে। সঠিক সময়ে বিজ্ঞান সম্মত আধুনিক উপায়ে শীতকালিন সবজি শিম চাষ করার পদ্ধতি জেনে বুঝে করতে পারলে চাষী বেশি লাভবান হবেন। যে সকল বন্ধুরা নতুন কৃষিতে পা রাখতে যাচ্ছে, অথবা বেশি অভিজ্ঞ নয়, তাদের বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের শুরুটা শিম দিয়ে হলে মন্দ হয় না।
কারন শিমে অন্যান্য সবজির মতো ভাইরাস নাই বললেই চলে। শীতে পোকা-মাকড়েরও আক্রমণ কম। গাছের গ্রথ খুব ভালো হয়। সার প্রয়োগেরও তেমন প্রয়োজন হয় না। চাহিদা প্রচুর। সব ধরনের মাটিতেই চাষ হয়। বাড়ির চালে, মাচায়, রাস্তা বা পুকুরের পাড় এমনকি জমির আইল ও গুল্ম জাতীয় গাছেও তুলে দিয়ে শিম চাষ হয়। বানিজ্যিকভাবে শিমের চাষাবাদ শুরু হওয়ায় কৃষকরা ব্যপক লাভবান হচ্ছে। গ্রীষ্মকালীন বা আগাম শিম চাষে অনেক কৃষকরা ঝুকে পড়েছেন।
শিম চাষের আধুনিক পদ্ধতি
জমি নির্বাচন
- দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতে শিম ভালো হয়।
- সিম গাছ জলাবদ্ধতা সহনশীল নয়।
- তাই উচু জমি নির্বাচন করতে হবে।
- জমিতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস থাকতে হবে।
-
Product on saleকেরালা শিমের বীজ (Kerala beans) ২০ গ্রামOriginal price was: 130.00৳ .100.00৳ Current price is: 100.00৳ .
-
Product on saleউচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড শসা ময়নামতি (High Yielding Cucumber)190.00৳ – 365.00৳
-
Product on saleবারোমাসি সজিনা ODC3 Variety Moringa Drumstick Seeds160.00৳ – 320.00৳
-
Product on saleহাইব্রিড পেঁপে টপ লেডি (BU Papaya-1) Top lady Papaya (১ গ্রাম)Original price was: 800.00৳ .560.00৳ Current price is: 560.00৳ .
শিমের জাত নির্বাচন
গ্রীষ্মকালীন শিমের জাত
গ্রীষ্মকালীন শিমের জন্য অটো শিম খুব উপযুক্ত। এটি বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে বপন করলে শ্রাবণ মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত বিরামহীন ফলন দিতে থাকে। গ্রীষ্মকালে কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১৪০ টাকা দরে শিম বিক্রি হয়। তবে এ সময় ফলন একটু কম হয়। এছাড়াও আইরেট, ইপসা-১ ও ২, বিইউ শিম-৪, বারি শিম- ৩ ও ৭ সহ আরো কিছু জাত আছে। তবে উল্লেখিত জাতগুলির চেয়ে বর্তমানে আলোচিত আগাম জাতের শিম হিসাবে কেরালা শিম ১ এর স্থান সবার উপরে। আগাম চাষের জন্য পুটি শিম অথবা গ্রীষ্মকালীন জাতগুলোই ব্যবহার করা যায়।
এ ছাড়া মাঝারি আগাম জাত হিসেবে বিইউ শিম-৩ আগস্ট মাস থেকেই বপন শুরু করা যায়।
শীতকালীন শিমের জাত সমুহ
শীতকালীন জাতের মধ্যে বারি শিম-১ হচ্ছে নাম্বার ওয়ান। এছাড়াও বারি শিম-৬, নলডগ, হাতিকান, গোলগাদ্দা সহ আরো বহু ধরনের শিমের জাত আছে। শীতকালীন শিমে বালাইনাষক কম দেয়া লাগে। তাই শীতকালীন শিম চাষে খরচ কম হয়।
জমি প্রস্তুতকরণ
ভালোভাবে কয়েকটি চাষ-মই দিয়ে জমি সমান করে নিতে হবে। শেষ চাষে জৈব/গোবর সার শতক প্রতি এক বস্তা করে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। কিছু ছাই ও খোইল দিয়ে দেয়া উত্তম। ৩ মিটার প্রশস্ত বেড তৈরী করে বেডের দুই পাশে ২ মিটার পর পর মাদা তৈরী করে প্রতি মাদায় ১০০ গ্রাম টিএসপি, ৫০ গ্রাম এমপি এবং সামান্য জীপসাম দিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ১ সপ্তাহ রেখে দিতে হবে। মাদার গর্ত ২ ফিট ব্যস ও ১.৫ ফিট গভিরতা দেয়া যায়।
বীজ বপন
আগাম চাষের জন্য জৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে আর শীতকালীন শিম চাষের জন্য শ্রাবণ-ভাদ্র মাসের মধ্যে বীজ বপন করতে হবে। মাদা প্রতি ৩-৪ টা বীজ অথবা ২-৩ টা সুস্থ চারা রোপন করলেই হবে।
মাচা প্রস্তুতকরণ
শিম গাছ লতা নিতে শুরু করলে মাচার ব্যবস্থা করতে হবে। অথবা বাশের আগা ও কঞ্চি ঘন ঘন পুতে দিয়েও গাছ উপরে তুলে দেয়া যায়।
শিম গাছের পরিচর্যা
গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে একটু উচু করে রাখতে হবে যাতে পানি জমতে না পারে। গোড়া আগাছামুক্ত রাখতে হবে। চারা রোপনের ২-৩ সপ্তাহ পর পর মাদা প্রতি ৫০ গ্রাম করে ইউরিয়া ও পটাশ সার দিতে হবে। চটা হলে ভেঙ্গে দিতে হবে। গাছ মাচায় ওঠার আগে নিচে যে শাখা-প্রশাখা বের হয়, তা ছেটে দিতে হবে। মাচায় গাছ অনেক ঘন হয়ে গেলে পাতা ছেটে মাচা ফাঁকা করে দিয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। অনেকগুলো লতা এক সাথে জোড় নিলে তা আলাদা করে দিতে হবে।
সার ও হরমন প্রয়োগ
বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদের ক্ষেত্রে সার প্রয়োগের বিকল্প নেই। ফলন সংগ্রহের পর বা গাছের অবস্থা বুঝে পরিমাণ মতো ইউরিয়া, পটাশ, ডিএপি, জিংক, বোরন ইত্যাদি সার দিতে হবে। মাটি শুকিয়ে গেলে পানির ব্যবস্থা করতে হবে। হরমন হিসেবে ফ্লোরা, লিটোসেন ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।
পোকামাকড় ও রোগ বালাই
বিভিন্ন সময় শিম গাছে রোগবালাই ও পোকামাকড় আক্রমন করে থাকে নিচে প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
পোকামাকড়
শিম গাছে জাবপোকা, সাদা মাছি ও ফল ছিদ্রকারী পোকা আক্রমন করে।
- জাব পোকা আর সাদা মাছির জন্য ইমিডাক্লোরোপ্রিড গ্রুপের কীটনাষক স্প্রে করতে হবে।
- আর ফলছিদ্রকারী পোকার জন্য এমামেকটিন বেনজয়েড গ্রুপের কীটনাষক অথবা সাইপারমেথ্রিন স্প্রে করতে হবে।
রোগ বালাই
শিম গাছের পাতায় সবুজ-হলুদ ছোপ ছোপ মোজাইক ভাইরাস দেখা যায়। শোষক পোকার আক্রমনে বা বীজ থেকে এ রোগ হয়। বীজ শোধন আর শোষক পোকা (সাদা মাছি ও জাব পোকা) দমন করতে হবে। অ্যানথ্রাকনোজ এর কারনে পচন হয়, শিম ফুল-ফল ঝরে পড়ে, ফলে স্পট পড়ে। নাটিভো বা এমিস্টারটপ দিয়ে পচন ঠিক করা যায়। এছাড়াও অন্যান্য ছত্রাকনাষকও ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও গাছের গোড়ায় নোমাটেড বা কৃমিতে আক্রমন করে শেকড়ে গিটের সৃষ্টি বা নষ্ট করে দিতে পারে। কার্বোফুরান প্রয়োগে এটি দমন হয়
ফলন সংগ্রহ
গ্রীষ্মকালীন গাছগুলো বীজ বপণের ৪৫ – ৫০ দিনের মধ্যেই ফুল চলে আসে। দেশি শিম গাছ যতো আগেই লাগানো হোক না কেনো, নভেম্বর মাসের আগে ফুল আসে না। তবে শিমের ফুল আসার জন্য ঠান্ডার প্রয়োজন হলেও গাছের বৃদ্ধির জন্য গরমের প্রয়োজন হয়। ফুল পরাগায়নের ১৫ দিন পর খাওয়ার উপযুক্ত হয়। শিমের আকার বড়ো হলে সপ্তাহে ২-১ বার সংগ্রহ করতে হয়। বীজ করেও খাওয়া যায়। নিয়মিত ফসল সংগ্রহ করলে ফলন বৃদ্ধি পায়। একটি কথা মনে রাখতে হবে- শিম গাছ যত বৃদ্ধি পাবে, ফলনও ততো বাড়বে। তাই তার বৃদ্ধির জন্য জায়গা করে দিতে হবে।
সঠিক সময়ে আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে শীতকালিন সবজি আগাম শিম চাষ পদ্ধতি জেনে বুঝে করতে পারলে চাষী বেশি লাভবান হবেন। তাই আসুন জেনে বুঝে শিম চাষ করি অধিক ফলন ঘরে তুলি।
লেখক
মোঃ মহিউদ্দিন অনিক
রাজশাহী
এই লেখকের অন্য লেখাগুলোঃ