গলদা চিংড়ি ঘের/পুকুর প্রস্তুতি ও পরিচর্যা
গলদা চিংড়ি ঘের/পুকুর প্রস্তুতি ও পরিচর্যা করার জন্য কিছু নিয়ম মানতে হবে। নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো।
গলদা চিংড়ির পুকুর প্রস্তুতি
সম্পূর্ণ পুকুর/ঘের শুকিয়ে ফেলতে হবে।
শুকানোর (৫-৭) দিন পর পাথুরে চুন (ক্যালসিয়াম অক্সাইড) প্রতি শতাংশে ১-১.৫ কেজি হারে পানিতে গুলিয়ে সমস্ত পুকুরের পাড় সহ ছিটিয়ে দিতে হবে। চুন ক্রয় করার সময় পাথরের দলা অবস্থায় চুন কিনতে হবে । কোন অবস্থাতেই গুড়া চুন ক্রয় করা যাবে না। চাষকালীন সময় ডলোমাইট বা ক্যালসিয়াম কার্বনেট ব্যবহার করতে হবে। যতদিন না পুকুরের তলদেশে কাদা শুকিয়ে শক্ত হচ্ছে ততদিন শুকিয়ে রাখতে হবে। সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওয়ার কয়েকদিন আগে সম্ভব হলে হাল চাষ করতে হবে। ৪-৬ ইঞ্চি পরিমাণ গভীর হবে এর বেশি নয়। পুকুর/ঘেরের পাড় ১৫-৩৫ ডিগ্রী অ্যাঙ্গেল হতে হবে। অ্যাঙ্গেলে নেট সম্মিলিত আবারন থাকবে যেনো পাড় সহজে ভেঙে না যায়।
-
Product on saleইউকা ম্যাক্স: মাছ ও চিংড়ির রুচি বৃদ্ধিকারক UKA-MAX220.00৳ – 870.00৳
-
Product on saleGrowth Jel মাছ ও চিংড়ির দ্রুত বৃদ্ধিকারক মাল্টিভিটামিন-680.00৳ – 1,100.00৳
-
Product on saleMega Super Plus, মাছ ও চিংড়ির গ্রোথ প্রোমোটর (Growth Promotor) ১ কেজি550.00৳
-
Biomin B+C, মাছের শক্তি বৃদ্ধিকারী ভিটামিন বায়োমিন বি প্লাস সি160.00৳ – 750.00৳
পুকুর/ঘের প্রস্তুতের উপকারিতা:
পুকুর/ঘের ভালো করে শুকালে / প্রস্তুত করলে উপকারিতা:
- জীবাণু ও ক্ষতিকারক প্রাণী মারা যাবে
- রাক্ষসী মাছ মারা যাবে
- তলদেশ শক্ত হবে। গলদা চিংড়ির বিচারনে সুবিধা হবে
- দীর্ঘদিন তলদেশে জমে থাকা অ্যামোনিয়া এবং ক্ষতিকারক গ্যাস দূর হবে
- মাটিতে অক্সিজেন তৈরি হবে
- মাটির পিএইচ পুনর্গঠন হবে
- প্রাকৃতিক ভাবে খাবার উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে
- চাষকালীন বিভিন্ন রোগব্যাধি কম হবে
- যেহেতু তলা শুকিয়ে শক্ত করা হবে তাই চাষ কালীন সময়ে পানি ঘোলা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে
- পানি ঘোলা কম হলে মাছের খাদ্য গ্রহণ এবং চলাচল সুবিধা হবে। মাছের বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে
- চাষ কালীন সময়ে এমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।
পুকুর/ঘেরের পাড়ে কোন গর্ত বা সাইতে থাকা যাবে না। তাহলে মাছ ইদুরে খাবে এবং অন্য পুকুরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। গলদা চিংড়ি চাষীদের নার্সারি পুকুর থাকা প্রয়োজন। নার্সারি পুকুর না থাকলে পুকুর/ঘেরের এক কোণে নেট দিয়ে নার্সারি পয়েন্ট করতে হবে। পুকুরের তলদেশ যথাসম্ভব সমান্তরাল হতে হবে। পুকুর প্রস্তুতি মার্চ-এপ্রিল মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। পানির সঠিক পিএইচ (৭.৫ – ৮.৫)
পুকুর প্রস্তুতির পর নতুন পানির ব্যবস্থা করতে হবে।
- রেনু পোনা/ চাষের উপযোগী পিস গলদা ছাড়ার পূর্বে প্রি-বায়োটিক প্রয়োগ ব্যবস্থা করতে হবে।
- রাইস ব্রান-৪০ গ্রাম-প্রতি শতাংশে
- মোলাসেস-৪০ গ্রাম-প্রতি শতাংশে
- ইস্ট-০.৫০ গ্রাম-প্রতি শতাংশে
- পানি দশগুণ-প্রতি শতাংশে
- ২৪ঘন্টা ফারমেন্টেশন করার পর সমস্ত পুকুর/ঘেরে ছিটিয়ে দিতে হবে।
- পুকুর/ঘেরের পানি-৩-৫ পর্যন্ত হতে পারে।
গলদা চিংড়ি মিশ্র চাষের জন্য মজুদ ঘনত্ব
মিশ্রচাষ মজুদ ঘনত্ব: (শতাংশ প্রতি) (১)গলদা চিংড়ি ৮০-১০০ টি (সাইজ ১.৫-২ ইঞ্চি) অথবা (২)রেনু ২০০-২৫০ পিচ (১) অথবা (২) যেকোনো একটি। রুই মাছ ২-৩ টি (সাইজ ৫-৮ ইঞ্চি) কাতল মাছ ১-২ টি (সাইজ ৫-৮ ইঞ্চি) সিলভার কার্প ১ টি
গলদা চিংড়ি একক চাষের জন্য মজুদ ঘনত্ব
গলদা চিংড়ি একক চাষের জন্য মজুদ ঘনত্ব (শতাংশ প্রতি) ৪০০-৪৫০ পিচ (রেনু) চাষকালীন সময় পানির তাপমাত্রা ২৫-২৯ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড হলে মাছের দৈহিক বৃদ্ধি সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়। ৩৫+ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এর অধিক হলে অক্সিজেন স্বল্পতায় এবং বিভিন্ন কারণে চিংড়ি মাছ মারা যেতে পারে।
গলদা চিংড়ি খাদ্য প্রয়োগ
১০০ শতাংশের জন্য ২-৩ তিনটি নির্দিষ্ট স্থানে খাদ্য প্রয়োগ করা উচিত। খাদ্য প্রয়োগের স্থান অবশ্যই কাদা মুক্ত হতে হবে তাতে করে খাদ্যগ্রহণ সহজ হবে। সম্ভব হলে নেটের খাদ্যদানি তৈরি করে নিতে হবে।
- সঠিক বৃদ্ধির জন্য ৩৫-৪০ % প্রোটিনসমৃদ্ধ পিলেট খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
- ১৫-২০ গ্রাম হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ৬-৮% হারে খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। ১৫-২০ গ্রাম অতিক্রম করলে ২-৩% হারে খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।
- ১৫-২০ গ্রাম হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দৈনিক ৩-৪ বার খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।
- পিলেট খাদ্য বেশিদিন রেখে দিলে খাদ্যের মান খারাপ হতে পারে তাই পুনরায় রোদে শুকিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
- ১৫-২০ গ্রাম অতিক্রম করলে ১-২ বার খাদ্য সরবরাহ করলে হবে।
- দিনের বেলা খাদ্য খায় তবে রাতের বেলা খাদ্য গ্রহণের পরিমাণটা বেশি। কোন ধরনের গোবর দেওয়া যাবে না।
- ভাইরাসমুক্ত পোনা মজুদ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
চুন প্রয়োগ
গলদা চিংড়ির ঘেরে পাথুরে চুন প্রয়োগে অবশ্যই pH মেপে প্রয়োগ করতে হবে। না হলে যেকোন সময় বিপদ দেখা দিবে। চিংড়ি ঘেরে পরিচর্যা কালিন সময়ে ডলোচুন বা কৃষি চুন ব্যবহার সর্বাপেক্ষা উওম।
চাষকালীন সময়ে ১৫-২০ দিন পর পর পাথুরে চুন ১০০-১৫০ গ্রাম হারে পানিতে গুলিয়ে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। এতে করে বিভিন্ন ছত্রাক, ক্ষুদ্র ক্ষতিকর কণা মারা যায়। এবং পানি পরিষ্কার হয়, পানিতে বাফারিং ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
সম্ভব হলে পুকুরের স্রোতের সৃষ্টি করতে হবে।
Calculation/ তথ্য কমবেশি ১৯-২০ হতে পারে সে জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
লেখক:
মোঃ জুলহাস
মৎসচাষী