1
তরমুজ চাষ পদ্ধতি

মালচিং ফিল্ম ও মাচায় চাষ করলে বর্ষা মৌসুমেও ভালো ফলন পাওয়া যায়।
সুবিধাঃ-
রোগ পোকার আক্রমণ কম হয়
মালচিং ফিল্মে আগাছা পরিষ্কার করতে হয়না।*আলো- বাতাস ঠিক মতো চলাচল করে
পরাগমিলন ভালো হয়
ফলের গুনগত মান ভালো হয়

মাটিঃ-
পানি জমে না এমন দোআঁশ – বেলে দোআঁশ মাটি।
বীজ বোনার সঠিক সময়ঃ-
জানুয়ারির শেষ থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম পক্ষ সর্বোত্তম।
তবে,জানুয়ারি, মে ও সেপ্টেম্বর মাসে বীজ বপন করা যায়।
বীজ বপনঃ-
প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বপন করা যাবে।বীজ বপনের ৮-১০ দিন আগে মাদা তৈরি করে মাটিতে সার মিশাতে হয়। ২ মিটার দূরে দূরে সারি করে প্রতি সারিতে ২ মিটার অন্তর মাদা করতে হবে। প্রতিটি মাদা সাধারণত ৫০ সেমি. প্রশস্ত ও ৩০ সেমি.গভীর হতে হবে। চারা গজানোর পর প্রতি মাদায় দুটি করে চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলাই উত্তম।

বীজের অঙ্কুরোদগমঃ-


শীতকালে খুব ঠাণ্ডা থাকে বিধায় বীজ ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে গোবরের মাদার ভেতরে অথবা মাটির পাত্রে রাখা বালির ভেতরে বীজ রেখে দিলে ২-৩ দিনের মধ্যে অঙ্কুরিত হয়। কেবল মাত্র বীজের অঙ্কুর দেখা দিলে তা বীজ তলায় বা মাদায় স্থানান্তর করা উত্তম।

চারা রোপনঃ-


বীজ বপণের চেয়ে তরমুজ চাষের ক্ষেত্রে চারা রোপণ করাই উত্তম। চারা তৈরির ক্ষত্রে ছোট ছোট পলিথিনের ব্যাগে বালি ও পচা গোবর সার ভর্তি করে প্রতিটি পলিব্যাগে ১ টি করে বীজ বপন করতে হবে। পরবর্তীতে ৩০-৩৫ দিন বয়সের ৫-৬ পাতাবিশিষ্ট ১ টি চারা মাদায় রোপণ করতে হবে।

একর প্রতি শেষ চাষের সময় জমিতে সার প্রয়োগ এর পরিমাণঃ-

গোবর/ কম্পোস্ট -২০০০ কেজি
টি এস পি-৩০ কেজি
পটাশ -২৫ কেজি
জিপসাম -২০ কেজি
ম্যাগনেসিয়াম সালফেট -১০ কেজি

ছিটিয়ে জমি ভালো করে চাষ দিতে হবে।

মাদা তৈরির সময় সারের পরিমাণঃ-
গোবর / জৈব সার-১ কেজি
ইউরিয়া -২০ গ্রাম
টিএসসি -৪০ গ্রাম
পটাশ-২৫ গ্রাম
চিলেটেড জিংক-৫ গ্রাম
সলুবোরন -৫ গ্রাম
কার্বোফুরান -৫ গ্রাম
কার্বেন্ডাজিম -৫ গ্রাম

বি. দ্র.- চা চামসের ১ চামস= ৫ গ্রাম।

চারা রোপনের ১০-১৫ দিন পরে ইউরিয়া ৩০ কেজি এবং পটাশ ১৫ কেজি ছোট রিং করে দিতে হবে ও আগাছা বেছে ফেলতে হবে।
ফুল আসার পর বড় রিং করে ইউরিয়া ১৮ কেজি এবং পটাশ ১৫ কেজি প্রয়োগ করতে হবে।

অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যাঃ-

গাছে যখন ৮-১০টি পাতা হয় তখন কমপক্ষে ৫টি গিট রেখে প্রধান শাখার মাথা কেটে দিতে হবে এবং পরবর্তীতে প্রধান শাখার সাথে ৪-৫ টি প্রশাখা রেখে বাকিগুলো কেটে ফেলতে হবে। প্রতি প্রশাখায় ১ টি করে ফল (১২-১৩ গিটে) রেখে অতিরিক্ত ফলগুলো ফেলে দিলে ভাল মান সম্পন্ন ফল পাওয়া যায়।

পরাগায়নঃ একই গাছে পুরষ ও স্ত্রী দু রকমের ফুল হয়। স্ত্রী ফুল স্বাভাবিকভাবে সম্পূর্ণ রূপে পরাগায়িত হয় না তা ঝরে যায বা ফলের আকার ভাল হয় না। • সকাল বেলা স্ত্রী ও পুরীষ ফুল ফোটার সাথে সাথে স্ত্রী ফুলকে পুরষ ফুল দিয়ে পরাগায়িত করে দিলে ফল ঝরে যায় না ও ফলের আকারও নষ্ট হয় না।

তরমুজ কিছুটা খরা সহ্য করতে পারে। তবুও শুকনা মৌসুমে সেচ দেয়া খুব প্রয়োজন। গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। স্যাঁতস্যাতে অবস্হায় তরমুজের গোড়ায় সহজেই পচা রোগ ধরতে পারে। মাটির উপর খড় বিছিয়ে দেয়া ভাল।

তরমুজের ফল কত বড় হবে তা অনেকটা নির্ভর করে গাছে ফলের সংখ্যার উপর। এজন্য প্রতি গা ৩-৪ টির বেশী ফল রাখা উচিৎ নয়। অতিরিক্ত সব ফল কচি অবস্হাতেই ফেলে দিতে হয়। গাছের শাখার মাঝামাঝি গিটে যে ফল হয় সেটিই রাখতে হয়। চারটি শাখায় চারটি ফলই যথেষ্ট।

ফসলের মাছি পোকা দমনে জমিতে আগে থেকেই সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যাবহার করতে হবে।

ফসল তোলা (পরিপক্কতা সনাক্তকরণ):-

জাত ভেদে বারমাসি তরমুজ ৫৫-৮০ দিনে এবং বড় তরমুজ ৯০-১২০ দিন পর ফল সংগ্রহ করা যায়। সম্পূর্ণ পাকার পর বোটাসহ ফল পাড়তে হয় ।আঙ্গুল দিয়ে টোকা দিলে যদি ড্যাব ড্যাব শব্দ হয় তবে বুঝতে হবে যে ফল পরিপক্কতা লাভ করেছে। অপরিপক্ক ফলের বেলায় শব্দ হবে অনেকটা ধাতবীয় ।

1 Comment

  1. Md tuhin December 3, 2023 Reply

    অনেক ভালো পরামর্শ,, আমি একজন ছোট তরমুজ চাষী,,, আপনাদের পরামর্শ অনেক ভালো লেগেছে

Leave a Comment

Your email address will not be published.

0

TOP

X