আমাদের দেশে পেয়ারা অতি পরিচিত ও ভীষন জনপ্রিয় একটি ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Psidium Guajava। পেয়ারা দ্রুত বর্ধনশীল গ্রীষ্মকালীন ফল। সব জেলাতেই কমবেশি পেয়ারার চাষ হয়ে থাকে। পেয়ারার মধ্যে সব থেকে সুস্বাদু ও মজাদার হলে থাই পেয়ারা। পেয়ারা চাষ করে অনেকেই সফলতার মুখ দেখেছে। দিন দিন পেয়ারা চাষীর সংখ্যা বেড়েই চলছে।
বানিজ্যিক ভাবে থাই পেয়ারা চাষ করে অল্প সময়ে কৃষক বেশি লাভবান হয়ে থাকে। এবং বাজারে দাম ও চাহিদা থাকায় এটি একটি লাভজনক ফসল।
পেয়ারার উৎপত্তি ও বিস্তার
পেয়ারার আদি নিবাস আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন উষ্ণ অঞ্চলে, বিশেষ করে পেরু হতে মেক্সিকোর যেকোন স্থানে। ধারনা করা হয় আনুমানিক ২০০০ বছর পূর্বে এটি চাষাবাদের আওতায় আসে। পরবর্তী সময়ে পর্তুগিজ ও স্প্যানিশদের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে দক্ষিন এশিয়ার দেশ গুলোতে ব্যাপক হারে পেয়ারার চাষ করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক কারণে বিভিন্ন জায়গায় নানান জাতের পেয়ারা দেখা যায়।
-
Product on saleসরিষার খৈল গাছের জন্য উপকারী সেরা মানের জৈব সার -Mustard Cake70.00৳
-
Product on saleহাড়ের গুঁড়া-Bone Powder- মাটির উপাদান বজায় রাখে, ১ কেজির প্যাকেট95.00৳
-
Product on saleবীজ অংকুরোদগম হরমন রটন প্লাস (Roton Plus)- বীজ অংকুরোদগমের সব থেকে ভাল হরমন135.00৳
-
Product on saleটারজান ফেরোমন ফাঁদ Tarzan Pheromone Trap100.00৳
পেয়ারার জাত পরিচিতি
আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতের পেয়ারা পাওয়া যায়। এর মধ্যে কাজি পেয়ারা, বারি পেয়ারা ২, বারি পেয়ারা ৩, বারি পেয়ারা ৪। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) থেকে উদ্ভাবিত জাত গুলো হলো বাউ পেয়ারা-১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভাবিত জাত ইপসাপেয়ারা। এসব উদ্ভাবিত জাতের পাশাপাশি জনপ্রিয় জাত হলো থাই পেয়ারা ৩,৫,৭। থাই জাতের পেয়ারা খেতে খুবই সুস্বাদু। অন্যান্য জাত গুলো হলো পলি পেয়ারা মুকুন্দপুরী, আঙ্গুর পেয়ারা , স্বরূপকাঠি, কাঞ্চননগর ও দেশি জাত।
পেয়ারা চাষের উপযুক্ত মাটি ও জলবায়ু
থাই জাতের পেয়ারা গাছগুলো বেশ সহনশীল হয়ে থাকে, মোটামুটিভাবে সব রকম মাটিতে থাই পেয়ারা চাষ করা যেতে পারে। পেয়ারা চাষের জন্য পানি নিষ্কাশন সুবিধা সম্পন্ন জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে দোআঁশ মাটিই উত্তম। পেয়ারার শিকড় বেশির ভাগ মাটির ০-০২ সেন্টিমিটার গভীরে থাকে, তাই মাটির উপরেরস্তর উর্বর থাকতে হবে। উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু পেয়ারা চাষের উপযুক্ত যা আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে মিলে যায়। পেয়ারা চাষের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা ২৩ °- ২৮ ° সে.। তবে পরিণত গাছ গুলো ৪৫° সে. তাপমাত্রায়ও বেঁচে থাকতে পারে।
পেয়ারা চাষ পদ্ধতি
অন্যান্য জাতের মতই জ্যৈষ্ঠ-আশ্বিন মাস পর্যন্ত থাই পেয়ারার চারা রোপণ করা হয়ে থাকে। পেয়ারা চাষের জন্য পানি নিষ্কাশন সুবিধা সম্পন্ন জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে দোআঁশ মাটিই উত্তম। ৮ হাত বাই ৮ হাত দুরত্ব বজায় রেখে চারা রোপন করতে হবে। ১.৫*১.৫ *১.৫ ফিট গর্ত করে থাই পেয়ারা গাছ লাগানোর আগে ২ ভাগ মাটির সাথে ১ ভাগ গোবর সার ও ৫০ গ্রাম টি.এস.পি, ৫০ গ্রাম পটাশ সার মিশিয়ে ১০-১২ দিনের জন্য গর্ত ভরাট করে রেখে দিতে হবে।
এর পর গর্তের ঠিক মাঝ খানে সেজা করে চারা লাগাতে হবে। চারা রোপণের পর গর্তের চারপাশে মাটি দিয়ে উচু করে দিতে হবে যাতে বাহিরের পানি এসে গাছের গোড়ায় না জমে। বাতাসে যাতে চারাটি হেলে না যায় তার জন্য শক্ত খুটির সাথে বেঁধে দিতে হবে। মাটিতে রসের অভাব হলে সেচের ব্যাবস্থা করতে হবে। ৬ মাস বয়স থেকে ফলন পেতে হলে অবশ্যই কলমের চারা লাগাতে হবে।
পেয়ারা চাষে সেচের নিয়ম
পেয়ারার ভাল ফলন পেতে হলে প্রতিবার গাছে সার প্রয়োগ করে, গাছের প্রয়োজনীয় রস সরবরাহের জন্য সেচ দিতে হবে। এ ছাড়া খড়া মৌসুমে নিয়মিত সেচ দিতে হবে, বাগানের মাটির রস যেন শুকিয়ে না যায়, সে দিকে খেয়ার রাখতে হবে, বর্ষা কালে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
পেয়ারার বাগানে সার প্রয়োগের নিয়ম নীতি
মাদা তৈরি করে প্রতি গর্তে ১-২ কেজি জৈব সার দিয়ে গাছ লাগাতে হবে। গাছ লাগানের পর গাছের যখন নতুন পাতা বের হবে তখন এমওপি২০/৩০ গ্রাম, ডিএপিসার ১০০-১৫০ গ্রাম সার গাছের গোড়ায় দিয়ে মাটি আলগা করে দিতে হবে। এবং সার প্রয়োগের পর বাগানে সেচ দিয়ে দিতে হবে।
পেয়ারার রোগ বালাই ও দমন
পেয়ারার গাছ ও ফল বিভিন্ন রকমের পোকা দ্বারা আক্রন্ত হয়ে থাকে। ছাতরা পোকা, সাদা মাছি পোকা, ফল ছিদ্রকারী পোকা। এ সকল পোকা মাকড়ের দমনের জন্য সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থা গ্রহন করলে ভাল উপকার পাওয়া যায়। যেমন মাটিতে পড়ে থাকা পোকা বা আক্রান্ত ফল কুড়িয়ে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। বিষ টোপ ও ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া কৃষি অফিসারের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিতে হবে।
পেয়ারা গাছের অঙ্গ ছাঁটাই
পেয়ারা গাছের যে সকল মরা, শুকনা রোগাক্রান্ত চিকন লিকলিকে ও অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছাঁটাই করে দিতে হবে । এসব কার্য সম্পন্ন করাকে গাছের অঙ্গ ছাঁটাই বলে।
ফ্রুট ব্যাগিং বা ফল ঢেকে দেওয়া
পেয়ারা বয়স যখন এক থেকে দেড়মাস হবে তখন ব্যাগিং করলে পেয়ারার কালার ভাল থাকে। রোগ বালাই পোকামাকড় পাখি বাদুর কাঠবিড়ালি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ব্যাগিং করার কারণে ফল বড় ও দেখতে সুন্দর হয়ে থাকে। সে কারনে বাজার মূল্য বেশি পাওয়া যায় কৃষক লাভবান বেশি হয়।
পেয়ারার ফলন ও ফল সংগ্রহ
তিন বছরের একটি কলমের গাছে বছরে ৭০/৮০ কেজি ফলন পাওয়া যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন হয়ে থাকে ৪০/৫০ টন। গাছ বৃদ্ধির সাথে সাথে ফলন বেশি হতে থাকে। থাই পেয়ারা চাষ সর্ম্পকে জেনে বুঝে করতে পারলে ফলন ভাল হবেই।
চারা গাছের বয়স যখন ৫/৬ মাস হবে তখন গাছে ফুল আসলে ফুল ভেঙ্গে দিতে হবে। ৮/৯ মাস বয়সে ফুল আসলে সে ফুল রেখে দিতে হবে। ফুল আসার ৩-৪ মাস পর ফল সংগ্রহ করতে হবে।
পেয়ারা পুষ্টিগুন ও সাস্থ্যগুন
পেয়ারা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি সহজলভ্য ফল। পেয়ারাকে পছন্দ করেনা এমন লোক খুজে পাওয়া যাবেনা। এর সুন্দর রং কচকচে স্বাদ ও মিষ্টির কারণে একে সবাই ভীষণ পছন্দ করে। পেয়ারা কাচা ও পাকা উভয় অবস্থায় খাওয়া হয়। পেয়ারাতে ভিটামিন সি এর পরিমান এতই বেশি যে একে ভিটামিন সি এর ব্যাংক বলা হয়ে থাকে।
পেয়ারা সাধারণত সহজলভ্য ও বহুগুনে গুনানিত একটি ফল, চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্র করে, পরিপাকে সাহায্য করে,ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে, ঠান্ডাজনিত সমস্যা দুর করে, দাঁত ব্যাথা নিরাময়ে, পেটের অসুখ নিরাময়ে, ক্ষত ঘাঁ, রক্ত চাপ নিয়ন্তণে, মাসিকের ব্যাথা নিরাময়ে, হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।
পেয়ারার ব্যবহার
পেয়ারা আমরা ফল হিসেবে খেয়ে থাকি। বিভিন্ন ভাবে এই ফলটি ব্যবহার হয়ে থাকে যেমন শরবত, কেক, ফ্রুট সালাদ এবং প্রক্রিয়াজাত করে পেয়ারা থেকে জুস,জেলী, জ্যাম তৈরি করা হয়।
চারা প্রাপ্তি স্থান
আমাদের দেশে বিভিন্ন জেলাতে অবস্থিত কৃষি অধিদপ্তরের সরকারি হার্টিকালচার সেন্টারে এবং বিভিন্ন নার্সারিতে পাবেন থাই জাতের পেয়ারার চারা।
অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা রোগমুক্ত ভাল মানের চারা সরবরাহ করে থাকি।
সতর্কতা
যে কোন চাষাবাদে আসার আগে সবার উচিৎ শতভাগ প্রশিক্ষিত হয়ে আসা তা হলে সফলতা অর্জন করতে পারবে। তাই যেনে বুঝে অভিজ্ঞ চাষি বা কৃষি অফিসারের সাথে পরামর্শ করে চাষ শুরু করা উচিত।
পেয়ারা চাষ করার আগে এর ভাল জাতের চারা সংগ্রহকরতে হবে চাষ পদ্ধতি রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে হবে। অভিজ্ঞ চাষী কৃষি কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ করে শুরু করা উচিত।
পেয়ারা টি খুব ভালো
ধন্যবাদ আপনাকে
Nice
আমার পছন্দকরে মধ্যে কৃষি বিষয়ক সবকিছু ধন্যবাদ ।