অতীতে আমাদের দেশে এক সময় হাওর-বাঁওড়, খাল-বিল, ডোবা পুকুর, জলাশয়ে প্রচুর প্ররিমাণে শিং মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানে জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাষক ব্যবহার ও কলকারখানার বৈজ্য সহ বিভিন্ন কারণে প্রাকৃতিক অভায়াশ্রম নষ্ট ও সংকুচিত হয়ে যাওয়ার কারণে এখন আর আগের মতো শিং মাছ তেমন একটা পাওয়া যায় না। আগেকার দিনে পুকুরে শিং মাছ চাষ করা হতো না।
সে কারণে কয়েক বছর আগে শিং মাছ বিলুপ্তির পথে গিয়োছিলে।
আশার কথা হলো বর্তমাণে আমাদের দেশের মৎস খামারিরা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে সফলভাবে পোনা উৎপাদন করায় শিং মাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছে।পুকুরে শিং মাছ চাষ একটি লাব জনক ব্যবসা। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধলা এলাকার মৎস চাষিরা শিং মাছ চাষ করে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা অর্জন করেছ।
আধুনিক পদ্ধতিতে শিং মাছ চাষের জন্য করণীয় কার্য সমূহ
পুকুর নির্বাচন
শিং মাছ চাষের জন্য পুকুর নির্বাচন করার সময় কিছু বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে।
- পুকুর বন্যামুক্ত স্থানে হতে হবে।
- পুকুরের পাড় মজবুত হতে হবে, কোন প্রকার ছিদ্র বা গর্ত থাকলে সমস্ত শিং মাছ বের হয়ে যাবে।
- বৃষ্টির সময় পুকুরের পানির উচ্চতা হবেনা এমন পুকুর নির্বাচন করতে হবে।
- শিং মাছ চাষের জন্য পুকুর আয়তাকার হলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
- পুকুরের আয়তন ৪০-৫০ শতাংশের বেশি হবে না।
- পুকুরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ১ ফুট ঢালু রাখতে হবে।
-
Product on saleBio-C Complex, মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী ভিটামিন বায়ো সি কম্পেলেক্স130.00৳ – 950.00৳
-
Product on saleইন-জাইম প্লাস, মাছ ও চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারক (Fish Disease Preventer)140.00৳ – 950.00৳
-
Biomin B+C, মাছের শক্তি বৃদ্ধিকারী ভিটামিন বায়োমিন বি প্লাস সি160.00৳ – 750.00৳
-
Product on saleParatic-RS: পরজীবী দমণকারী, মাছ ও চিংড়ির উকুননাশক (৫৫ মিলি)Original price was: 230.00৳ .200.00৳ Current price is: 200.00৳ .
পুকুর প্রস্তুতি
শিং মাছ নতুন পুরাতন উভয় পুকুরেই চাষ করা যায়। পুরাতন পুকুরেই শিং মাছ চাষ ভাল হয় নতুন পুকুরের থেকে। নতুন পুকুরে শিং মাছ চাষ করতে হলে পুকুরের তলদেশ ভালভাবে চাষ দিয়ে শতাংশ প্রতি কমপক্ষে ২০ কেজি গোবর ছিটিয়ে মই দিয়ে তারপর চুন দিতে হবে। এতে করে মাটির উর্বরতা বাড়বে।
শিং মাছের পুকুর উর্বর না হলে অনেক সময় শিং মাছ আঁকাবাঁকা হয়ে যায়। পুরাতন পুকুর হলে প্রথমেই সেচ দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। পুকুরের তলদেশে বেশি কাদা থাকলে উপরের স্তরের কিছু কাদা উঠিয়ে ফেলতে হবে। কাদা উঠানের পর প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
পুকুরের চার পাশে নেট জাল দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। এতে করে পুকুরে ব্যাঙ ও সাপ প্রবেশ করতে পারবে না। ব্যাঙ বেশি ক্ষতি না করলেও সাপ শিং মাছের জন্য বেশিই ক্ষতিকর। শিং মাছের পোনা ধীর গতিতে চলাচল করে থাকে। এ কারণেই সাপ অনেক পোনা খেয়ে ফেলতে পারে।
পুকুরের চারপাশে জাল দেওয়ার পর গভির নলকুপ থেকে ২ থেকে ৩ ফুট পানি দিতে হবে।পানি দেওয়ার ২ থেকে তিন দিনের মধ্যে শিং মাছের পোনা ছাড়তে হবে। পোনা ছাড়ার পর এক ইঞ্চির একটি জাল পুকুরে পেতে রাখতে হবে । যদি কোনভাবে কোন সাপ পুকুরে প্রবেশ করে থাকে তাহলে এই জালে আটকা পড়বে।
পুকুরে পোনা মজুদেরনিয়ম
পুকুর প্রস্তুত হয়ে গেলে গুণগতমানের পোনা উৎপাদনকারী হ্যাচারা থেকে প্রায় ২ ইঞ্চি সাইজের পোনা সংগ্রহ করতে হবে। পোনা উৎপাদন প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় অনেক হ্যাচারি শিং মাছের পোনা উৎপাদন করে থাকে। কিন্তু পোনা মজুদের ক্ষেত্রে অনেক হ্যাচারি সঠিক ব্যবস্থাপনা জানেন না।
আর না জানার কারণে শিং মাছের পোন মজুদের পর ব্যপক হারে মড়ক দেখা দেয়। শিং মাছের পোনার মড়ক থেকে রক্ষা পাবার জন্য প্রথমেই হ্যাচারিতে পোনা তেলার পর কন্ডিশন করে এন্টিফাঙ্গাস মেডিসিনের পানিতে গোসল করাতে হবে।
এর পর পোনা ডেলিভারি দিতে হবে। পোনা পরিবহনের পর এন্টিফাঙ্গাস মেডিসিনের পানিতে গোসল দিয়ে তার পর পুকুরে ছাড়তে হবে। তা না হলে পোনা পুকুরে ছাড়ার পর ক্ষতরোগে আক্রান্ত হতে পারে এবং মড়ক দেখা দিতে পারে। পুকুরে পোনা ছাড়ার ২/৩ দিন পর একই জাতীয় ওষধ পানিতে মিশিয়ে সমস্ত পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে শিং মাছের পোনা মজুদ করলে আর কোন রোহবালাই আসবে না।
পোনামজুদের ঘনত্ব
পুকুরে শিং মাছ এককভাবে ও মিশ্র ভাবে চাষ করা যায়। এককভাবে শিং মাছ চাষে প্রতি শতাংশে ৫০০ থেকে ১০০০ টি পর্যন্ত মজুদ করা যায়। মিশ্রভাবে চাষ করলে কার্প জাতীয় মাছের সাথে ৩০ টিন পর্যন্ত প্রতি শতাংশে আঙ্গুল সাইজের শিং মাছের পোনা ছাড়তে হবে। কার্প জাতীয় মাছ ছাড়া পাঙ্গাস ও তেলাপিয়ার সাথে শিং মাছ চাষ করা যায়।
সে ক্ষত্রে শিং মাছের পোনা প্রতি শতাংশে ৫০টি পর্যন্ত ছাড়া যাবে। কার্প জাতীয় , তেলাপিয় বা পাঙ্গাস মাছের সাথে শিং মাছ চাষ করলে বাড়তি খাবারের দরকার হয় না। পুকুরের তলদেশের উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়েই শিং মাছ বড় হয়ে থাকে। শিং মাছ উপরোন্ত মাছের সাথে মিশ্রভাবে চাষ করলে পুকুরে অ্যামোনিয়াসহ অন্যান্য গ্যাস কম হয়ে থাকে।
খাবার প্রয়োগ পদ্ধতি
পুকুরে শিং মাছ মজুদ করার পর, পোনাকে প্রথম ১০ দিন মাছের ওজনের ২০% খাবার দিতে হবে। শিং মাছ ছোট অবস্থায় সাধারণত রাতের বেলা খাবার গ্রহন করে। তাই খাবারকে দু ভাগে সমান ভাগ করে একভাগ সন্ধ্যার পরে আর অন্য এক ভাগ ভোরের দিকে একটু অন্ধকার থাকতে পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। মাছ মজুদের পরের ১০ দিন ১৫% হারে এবং এর পরের ১০ দি ১০% হারে একই নিয়মে খাবার দিতে হবে।
এভাবে একমাস খাবার দেওয়ার পর ৫% হারে পুকুরে খাবার দিতে হবে। শিং মাছ ছোট অবস্থায় রাতের বেলা খাবার গ্রহণ করলেও একটু বড় হলে (৩ ইঞ্চি সাইজ হলে ) দিনের বেলাতে খাবার দিতে হবে। ভোরবেলাতে যে খাবার দেওয়া হতো সে খাবার সকাল ৮/৯ টার দিকে দিতে হবে। আর যে খাবার সন্ধ্যার দিকে দেওয়া হতো সে খাবার আস্তে আস্তে বিকেলের দিকে দিতে হবে।
শিং মাছের ওজন যখন ১৫ গ্রাম হবে তখন ৩% হারে খাবার দিতে হবে এর বেশি খাবার দেয়া মোটেই ঠিক নয়। মাছ বিক্রয় করার আগ পর্যন্ত এই নিয়মে খাবার প্রয়েগ করতে হবে। পুকুরে বেশি পরিমানে খাবার দিলে পানি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
শীতকালে শিং মাছ চাষে করণীয়
শীতকালে শিং মাছের রোগবালাই থেকে মুক্ত রাখার জন্য প্রতি ১৫ দিন পরপর পুকুরের পানি পরিবর্তন করে দিতে হয়। সাথে প্রতি মাসে একবার হলেও এন্টিফাঙ্গাস মেডিসিন ব্যবহার করতে হবে। পানির উচ্চতা ২ ফুটে রাখতে পারলে ভালো। শিং মাছের পুকুরে গ্যাস দুর করার জন্য কোন অবস্থাতেই হররা টানা যাবেনা। হররা টানা হলে মাছ খাবার ছেড়ে দেয় এতে আরো বেশি গ্যাসের সৃষ্টি হয়। পুকুরের তলদেশের অ্যামোনিয়া গ্যাস দুর করার জন্য গ্যাসোনেক্স ব্যবহার করা যেতে পারে।
মাছ সংগ্রহের সঠিক নিয়ম
পুকুরে অন্যান্য মাছ জাল টেনে ধরা গেলেও কিন্তু শিং মাছ জাল টেনে ধরা যায় না।শিং মাছ ধরার জন্য শেষরাতের দিকে পুকুরের পানি সেচ দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। শিং মাছ ধরার সঠিক সময় হলো ভোরবেলা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত। রোদের সময় শিং মাছ ধরা যাবেনা কারণ রোদের সময় শিং মাছ ধরলে মারা যাবার সম্ভাবনা থাকে।
মাছ ধরার সময় মাছ থেকে গেলে গভীর নলকুপ থেকে পুকুরে ২ফুট ঠান্ডা পানি দিয়ে পুকুর ভরে রাখতে হবে। পরের দিন একই ভাবে আবার মাছ ধরতে হবে। শিং মাছের পুকুর অন্যপাশ থেকে এক পাশে ১ ফিট ঢালু রাখতে হয়। এটার সুবিধাটা হলো পুকুর সেচ দেয়ার সময় সমস্ত মাছ একপাশে চলে আসে।
শিং মাছের খাবার তালিকা
শিং মাছের জন্য অধিক প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। শিং মাছ পুকুরের তলার জলজ কীট খেয়ে থাকলেও লাভজনক চাষে মানসম্মত সম্পুরক খাবার দিতে হবে। খাবারে কমপক্ষে ৩২ ভাগ প্রোটিনসমৃদ্ধ হতে হবে। এক্ষেত্রে কারখানার প্রস্তুকৃত মানসম্মত খাবারই উত্তম। বেশি ভাল হয় ভাসমান খাবার প্রয়োগ করলে। এক্ষেত্রে পুকুরের তলদেশে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় থাকে।
শিং মাছের খাবারের প্রোটিন ঠিক রাখার জন্য নিজে খাবার প্রস্তুত করা যেতে পারে। যে সকল উপাদান লাগবে-
- ফিসমিল ৩০%
- সয়ামিল ৩০%
- অটোব্রান ২০%
- ভুট্টার গুড়া ১০%
- আটা ১০%
লবন ২ কেজি, ভিটামিন প্রিমিক্স ২৫০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১ কেজি, চিটাগুড় ২ কেজি। এসকল উপাদান দিয়ে খাবার তৈরি করলে প্রোটিনের পরিমান ৩৩% এর কাছাকাছি হবে।
শিং মাছচাষের আদর্শ সময়ও মেয়াদকাল
শিং মাছ চাষ করার জন্য এপ্রিল-মে মাস থেকে শুরু করা ভাল। যারা আগের বছরের শেষ দিকে শিং মাছের পোনা নার্সিয়ে চাপে রাখে থারা ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকে পরিকল্পিতভাবে চাষ শুরু করতে পারেন।
মানসম্মত পোনা , সুষম খাবার এবং সঠিক চাষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে ছয় থেকে সাত মাসে প্রতিটি শিং মাছের গড় ওজন হবে ৬০-৭০ গ্রাম। পুকুরের পানির গুণাগুণ সঠিক মাত্রায় রক্ষা করা গেলে আরো ভাল কিছু প্রতাশা করা যায়।
সাবধনতা অবলম্বন
শিং মাছ ধরার সময় একটু সাবধনতা অবলস্বন করতে হয়। মাছের কাটা বিঁধলে সেখানে অসহ্য বেথা করে। কাটা বিঁধানো জায়গায় ব্যথানাশক মলম লাগাতে হয় এবং গরম পানি দিলে সাথে সাথে কিছুটা উপশম হয়। তাই শিং মাছ ধরার আগে এমন ব্যবস্থাপত্র রাখা ভালো।
সরাসরি মৎস্য অফিস থেকে কি আমরা কোনো সহায়তা পাব ?
হাঁ আপনি আপনার উপজেলার মৎস্য অফিস থেকে সহায়তা পাবেন, সেখান সরাসরি যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ আপনাকে সাথেই থাকুন।
নতুনদের জন্য অনেক উপকারি পোস্ট, ধন্যবাদ।
শিং মাছের পোনা দিনাজপুরের কোথায় পাওয়া যায়?
শিং মাছের পোনা আমাদের কাছ থেকে পাবেন- ০১৮৩২-৪১১৪২২
ভাই আপনার হ্যাচারি কোথায়?
আমাদের হ্যাচারি নেই ভাই
চট্টগ্রামে শিং মাছের পোনা কোথায় পাওয়া যায়। আর নরসিংদী থেকে আনতে চাইলে কিভাবে আনা যায়।
চট্টগ্রামে শিং মাছের পোনার জন্য আপনার আশেপাশের হ্যাচারিতে খোঁজ নিন। নরসিংদী থেকে নিতে চাইলে গাড়িতে নিতে পারবেন। আমাদের সাথ যোগাযোগ করতে পারেন। 01832411422
শিং মাছকে মুরগির নারি ভড়ি দেওয়া য়াবে।
না, শিং মাছ মাংস জাতীয় খাবার খুব ভাল পছন্দ করেনা
কৈ মাছ কে দিতে পারবো মুরগির নারি ভড়ি।
শিং মাছের মুখের ও লেজের সাদা সাদা দাগ থাকলে কি প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার করা যায়