যদি প্রশ্ন করা হয় যে এগুলো কীসের ছবি? এর উত্তরে হয়তবা অনেকেই ভদ্রভাবে বলে দিবেন যে এগুলো হচ্ছে হরেক রকম কীটনাষকের ছবি। অনেকে বলবে যে এগুলো বিষ। আসলে সাধারণ কৃষকদের এ দুটো নামই জানা আছে৷ এর বাইরে আর জানা নাই। আর এটাই সাধারণ কৃষকদের মূর্খতা প্রমান করে। তবে শুকরিয়া করি যে বর্তমানে যুবক কৃষক ভাইয়েরা বালাইনাষক বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠছে। তারা খুটি-নাটি জানার জন্য উৎসুক হয়ে আছে। কোন বালাইনাষকের কী কাজ… এ বিষয়ে অনেক জ্ঞান অর্জন করে ফেলেছে এবং আরো জানতে আগ্রহী। আর এই কারনেই সকলের জন্য লিখালিখি করতে পছন্দ করি, যদিও আমার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা খুবই সীমিত।
বালাইনাষকের প্রকারভেদ ও তার কাজ
কোন বালাইনাষকের কী কাজ? এ বিষয়ে যদি আপনার সামান্যতম জ্ঞানও না থাকে, তাহলে আপনি একজন অন্ধ কৃষক। এমতাবস্থায় আপনাকে বালাইনাষক ডিলার এবং বিক্রেতার উপর অন্ধভাবে আস্থা রাখতে হবে। আর তারাতো এটাই চাইবে৷ তারা আপনার কান ধরে যেদিকে নিয়ে যাবে, সেদিকেই যেতে হবে, যেদিকে ঘুরাইবে, সেদিকেই ঘুরতে হবে। তারা যেটিকে ভালো বা মন্দ বলবে, আপনাকে তাদের কথাই মানতে হবে৷ অনেক জায়গায় পাশের কৃষকও পরামর্শ দিতে কার্পণ্য করে, গোপন রাখার জন্য এক বালাইনাষক আরেক বোতলে করে মাঠে নিয়ে আসে৷ এ কারনে কোন বালাইনাষকের কী কাজ, সে বিষয়ে কিছুটা ধারনা রাখা অপরিহার্য।
আজ আমরা আলোচনা করবো Nature of pesticide বা প্রাকৃতিগতভাবে বালাইনাষকের প্রকারভেদ সম্পর্কে। আমরা পূর্বের পোস্টে (Pesticide বা বালাইনাষক কি? ও পেস্টিসাইডের প্রকারভেদ) জেনেছি যে- পেস্টিসাইডের Nature বা সাধারণভাবে একে ৮ শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। যেমনঃ- ১. কীটনাষক – Insecticide ২. ছত্রাকনাষক – Fungicide ৩. আগাছানাষক – Herbicide ৪. ইদুর নাষক – Rodenticide ৫. কৃমি নাষক – Newmatiocide ৬. মাকড় নাষক – Acaricide ৭. শৈবাল নাষক – Algicide ৮. শামুক নাষক – Limacides আজ এগুলোই একটু আলোচনা করবো ইনশাল্লাহ। আপনারা অনেকেই হয়তবা এগুলোর সম্পর্কে ভালোমতোই অবগত আছেন… তার পরও নতুন জ্ঞান উৎসুক কৃষকদের জন্য আশা করি এটি উপকারী পোস্ট হবে। সুতরাং আলোচনা শুরু করা যাক…
১ কীটনাষক (Insecticide)
কীটনাষক হচ্ছে বালাইনাষকের প্রধান অংশ। যে সকল বালাইনাষক ঔষধ ফসলের ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ দমন ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সেগুলোকে কীটনাষক বলে৷ ফসলের খেতে বহু ধরনের কীট-পতঙ্গ বা পোকা দেখা যায়। এদের দ্বারা ফসলের ব্যপক পরিমান ক্ষতি হয়ে থাকে। কোনটি পাতা, ফুল-ফল ছিদ্র করে বা কুরে কুরে খেয়ে নেয়। আবার কোনটি গাছ ও পাতার রস চুষে গাছকে একেবারে দুর্বল ও রোগাক্রান্ত করে ফেলে৷ আবার কোনটি মাটির নিচে থেকে গাছের গোড়া, শেকড় বা গাছের বাইল কেটে দেয়। আর তাই এদের দমন ও নিয়ন্ত্রণের জন্যই কীটনাষক বা Insecticide ব্যবহার করা হয়। উদাহরণত- নিচের ছবিতে আপনারা কারটাপ এবং ইমিটাফ দেখতে পাচ্ছেন। এ দুটো হচ্ছে কীটনাষক।
-
Product on saleক্যাপচার ৭৫ ডব্লিউডিজি Capture 75 WDG (২ গ্রাম)Original price was: 27.00৳ .20.00৳ Current price is: 20.00৳ .
-
Product on saleটারজান ফেরোমন ফাঁদ Tarzan Pheromone TrapOriginal price was: 130.00৳ .100.00৳ Current price is: 100.00৳ .
-
Product on saleলুমেকটিন ১০ ডব্লিউডিজি Lumectin 10 WDG (১০ গ্রাম)Original price was: 55.00৳ .45.00৳ Current price is: 45.00৳ .
-
Product on saleহাড়ের গুঁড়া-Bone Powder- মাটির উপাদান বজায় রাখে, ১ কেজির প্যাকেটOriginal price was: 105.00৳ .95.00৳ Current price is: 95.00৳ .
২ ছত্রাকনাষক (Fungicide)
বালাইনাষকের আরো একটি অন্যত্তম বড় অংশের নাম হচ্ছে ছত্রাকনাষক বা Fungicide. আসলে ছত্রাক বলতে আমরা এতোদিন ব্যঙের ছাতা বা মাশরূমকেই চিনেছি। হ্যা, এগুলোও এক ধরনের (Agaricus জাতীয়) ছত্রাক, তবে কৃষিক্ষেত্রে যে ছত্রাক ক্ষতিসাধন করে, সেগুলো ভিন্ন প্রজাতির এবং এতোই ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না। ছত্রাক সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিজের খাদ্য তৈরী করতে পারে না, তাই এটি উদ্ভিদ নয় এবং এটি প্রাণীও নয়, বরং ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের একটি পরভোজী জীব। এদের বীজগুটি পানি বা বাতাসে ভেসে গাছের পাতা ও ডালপালায় পৌছে এবং অঙ্কুরিত হয়। দ্রবীভূত অনুগুলো শোষন করে এবং পচনের সুত্রপাত ঘটায়। অনুকূল আবহাওয়া পেলে এরা গাছপালায় পচন সৃষ্টির মাধ্যমে প্রচুর ক্ষতিসাধন করে থাকে। এরা যাতে গাছপালায় এসে অঙ্কুরিত হতে না পারে এবং মারা যায়, সে কারনে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকনাষক স্প্রে করা হয়ে থাকে। নিচের ছবিতে মেনকোজেব (জ্যাজ), কার্বেন্ডাজিম (আরবাআ), প্রপিকোনাজল (টিল্ট) ইত্যাদি হচ্ছে বহুল প্রচলিত ছত্রাকনাষক।
৩ আগাছানাষক (Herbicide)
আগাছা হচ্ছে অবাঞ্চিত, সমস্যা সৃষ্টিকারী অনিষ্টকর উদ্ভিদ যা বপন ছাড়াই অতিমাত্রায় হয়ে থাকে। এরা সাধারণত প্রতিযোগী ও অদম্য এবং অধিক বংশবিস্তারে সক্ষম হওয়ায় আবাদি জমির গাছের সাথে প্রতিযোগিতা করে মাটির উর্বরতা ও খাদ্য খেয়ে নেয়। এতে গাছপালা দুর্বল হয়ে যায় এবং আশানুরূপ ফলনে বাধাগ্রস্ত হয়। সাধারণত নিড়ানি অথবা কোদাল দিয়ে কুপিয়ে আগাছা পরিস্কার করা হয়ে থাকে, তবে এটি অত্যান্ত কষ্টকর, সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল পদ্ধতি। এ সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্যই আগাছানাষক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর দ্বারা সামান্য খরচে, অল্প পরিশ্রমে আগাছা দমন করা যায়। বাজারে দুই ধরনের আগাছানাষক দেখা যায়৷
১. সিলেক্টিভ আগাছানাষকঃ-
এ জাতীয় আগাছানাষক নির্দিষ্ট ফসলী গাছের কোন ক্ষতি না করে কেবল অন্যান্য অবাঞ্ছিত আগাছাকে দমন করে ফেলে। যেমন- নিচে ধান গাছের জন্য “প্রেটিলাক্লোর” গ্রুপের (রিফিট) এর ছবি দেয়া আছে। এছাড়া পাট খেতের আগাছা দমনের জন্য নিচের ছবিতে “কুইজালোফপ-পি-ইথাইল” (টাইজালোসুপার) এবং “ইথক্সিসালফুরান” (মুনরাইজ) দেয়া আছে। পেয়াজ খেতের সকল আগাছা দমনের জন্য পেন্ডামেথালিন গ্রুপের ছত্রাকনাষক ব্যবহার করা হয়। এগুলো ছাড়াও আরো বহু ধরনের আগাছানাষক বহুল পরিমানে ব্যবহৃত হয়। ….. এক বিঘা জমির আগাছা পরিস্কারের জন্য আনুমানিক ১০ টি লেবার প্রয়োজন হয় যেখানে ৩,০০০ (৩ হাজার) টাকা খরচ হয়ে যেতে পারে। অথচ মাত্র ১০০ টাকার একটি “রিফিট” ব্যবহারে প্রায় সকল আগাছা দমন হয়ে যায়। তাই আগাছানাষকের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২. নন সিলেক্টিভ আগাছানাষকঃ-
এটি সাধারণত পরিত্যাক্ত জমিতে বেশি ব্যবহৃত হয়। নিচের ছবিতে গ্লাইফোসেট গ্রুপের দুটি (সান আপ এবং জাহামা) আগাছানাষকের ছবি দেয়া আছে। এছাড়াও প্যারাকোয়াট গ্রুপের আগাছানাষক খুব বেশি ব্যবহৃত হয়। এগুলো অনির্বাচিতভাবে সকল ধরনের আগাছাকে পুড়িয়ে বা গোড়া সহ পচিয়ে নিঃশেষ করে দেয়।
৪ ইদুর নাষক (Rodenticide)
এটিও পেস্টিসাইডের আরো একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ। ইদুরকে কখনও হালকাভাবে নেয়া উচিৎ নয় ৪_ইদুর_নাষক (Rodenticide) এটিও পেস্টিসাইডের আরো একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ। ইদুরকে কখনও হালকাভাবে নেয়া উচিৎ নয়, কারন ইদুর আমাদের দেশের উৎপাদিত ধান-গমের ১০% খেয়ে নষ্ট করে। এছাড়াও বহু ধরনের ফসল এবং খাদ্য নষ্ট করে থাকে। প্রতি বছর বাংলাদেশে ইদুর ৫০-৫৪ লক্ষ মানুষের ১২ মাসের খাবারের সমপরিমান খাদ্য নষ্ট করে থাকে। এবং প্রতি বছর এশিয়ায় ১৮ কোটি মানুষের ১২ মাসের খাবার নষ্ট করে এই ইদুর। এই ইদুর দমন করা এতো সহজ কাজ নয়। এটি দমনের জন্য খুব শক্তিশালী বিষ প্রয়োগ করতে হয়। “জিংক ফসফাইড” প্রয়োগের মাধ্যমে ইদুর খাওয়ার সাথে সাথেই মারা যায়। এছাড়াও দির্ঘস্থায়ী বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে বেশি পরিমান ইদুর দমন করা যায়। “সাইনোগ্যাস ফসটকসিন” ট্যাবলেট দিয়েও ইদুর দমন করা হয়। নিচের ছবিতে গ্যাস ট্যবলেট আর লানিরেট হচ্ছে ইদুর দমনের জন্য দুটি Rodenticide এর উদাহরণ।
৫ কৃমি নাষক (Newmatiocide)
নেমাটোডা বা কৃমি খুব ছোট হওয়ায় চোখে দেখা না গেলেও এটি ফসলের মারাত্বক ক্ষতি করে থাকে। টমেটো, শিম, লাউ, পুইশাক সহ বহু ফসল চাষাবাদের সময় এদের শেকড়ে আক্রমণ করে, এতে শেকড় ফুলে গিটের সৃষ্টি হয়। শুরুতে ব্যবস্থা না নিলে আস্তে আস্তে শেকড় অনেক বেশি ফুলে যায় এবং এবড়ো-থেবড়ো হয়ে যায়। শেকড়ের কার্যকারিতা নষ্ট হয় এবং পরবর্তীতে তা পচে যায়। এর ফলে গাছের গ্রোথ কমে গিয়ে গাছ দুর্বল ও হলুদ বর্ণ ধারণ করে। ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়। নিচের চিত্রে যে সকল দানাদার বিষের ছবি দেয়া আছে- যেমনঃ- কার্বোফুরান, ফিপ্রনিন ইত্যাদি ব্যবহার করে সফলভাবে নেমাটোড নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৬ মাকড় নাষক ( Newmatiocide)
কৃষি ক্ষেত্রে সুধু কীট-পতঙ্গ নয়, মাইট বা মাকড়েরও আক্রমণ হয়। লাল মাকড়, হলুদ মাকড়, সাদা মাকড় ইত্যাদি। এরা অতি ক্ষুদ্র হওয়ায় খালি চোখে দেখা যায় না। কচি পাতার নিচে বসে পাতার রস চুষে গাছকে একেবারে দুর্বল করে দেয়। পাতা নিচের দিকে কুকড়ে যায়। এরা ভাইরাসের বাহক হিসেবেও কাজ করে। এদের দমন করার জন্যই মাকড়নাষক বা Newmatiocide ব্যবহার করা হয়। চিত্রে “এবামেকটিন” গ্রুপের (লিকার ও ভারটিমেক) দুটি মাকড়নাষক এবং “সালফার” (থিওভিটকেও) মাকড়নাষক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
৭ শৈবাল নাষক (Algicide)
পৃথিবীতে প্রায় ৩০ হাজার প্রজাতির শৈবাল আছে৷ শৈবাল অনেক ক্ষেত্রে উপকারী হলেও অতি মাত্রায় বৃদ্ধি পেলে তা দমন করার প্রয়োজন হয়। শৈবালের কারনে পুকুরের পানি নোংরা হয়ে যায়। পানি পরিস্কার ও স্বচ্ছ রাখার জন্য শৈবাল দমন করতে হয়। অনেক সময় পুকুরের পানির উপরে নীলাভ সবুজ শৈবালের আস্তরণ পড়ে, যাকে বলা হয় “#ওয়াটার_ব্লুম”। এর কারনে পুকুরের পানি দুষিত হয় এবং খাবার অনুপযুক্ত হয়। এতে পুকুরে বসবাসকারী মাছ ও অন্যান্য প্রাণী রোগাক্রান্ত হয়। বাতাসের অক্সিজেন পানিতে যেতে পারে না, এতে পুকুরের পানিতে অক্সিজেনের সংকট হয়ে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী মারা যায়। তাই শৈবাল দমন করার জন্য Algicide ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৮ শামুক নাষক (Limacides)
জলাশয়ে অতিরিক্ত শামুক বৃদ্ধি পেলে কদাচিৎ অক্সিজেনের স্বল্পতা হতে পারে। এতে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী মারা যেতে পারে। শামুকের কিছু প্রজাতি আছে, যারা শষ্য ও বাগানের গাছের ক্ষতিসাধন করতে পারে। তাই শামুক দমন করার জন্য Limacide ব্যবহার করা হয়।
তাহলে আমাদের কাছে ছবিটা স্পষ্ট হয়ে গেলো যে এখানে সুধুমাত্র কীটনাষক নয়, হরেক রকম বালাইনাষক উপস্থিত আছে। আগামিতে প্রতিটা টপিক নিয়ে আরো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে এবং পেস্টিসাইডের আরো বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো… ইনশাল্লাহ। সকলের জন্য কল্যাণ কামনা রইলো। মনযোগ দিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
লেখক
মোঃ মহিউদ্দিন অনিক
রাজশাহী
এক কথায় অসাধারণ।