কিছু কিছু গাছ আছে, যা সরাসরি মুল জমিতে রোপন করা যায় না। প্রথমে বীজতলায় বিশেষ পরিচর্যার মাধ্যেমে চারা তৈরী করে নেয়া হয়। পরবর্তিতে মূল জমিতে রোপন করা হয়। বেগুন, মরিচ, ফুলকপি, বাধাকপিসহ আরো অনেক গাছের চারা বীজতলায় তৈরী করা হয়ে থাকে। বিশেষভাবে পরিচর্যার মাধ্যেমে বীজ থেকে রোপন উপযুক্ত চারা তৈরী করা হয়।
আর এই চারা তৈরীর স্থানকেই বীজতলা বলা হয়ে থাকে। বর্তমানে হাইব্রিড বা উচ্চ ফলনশীল গাছের চারা নার্সারিতে সহজে পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তার উচ্চ মূল্যের কারণে ক্রয় করে চাষাবাদ করা কষ্টকর হয়।
তাই অতিরিক্ত খরচ এড়াতে ও পছন্দমতো ভালো জাতের সবজি চাষাবাদ করতে হলে একটাই পথ…. আর সেটা হলো বীজ ক্রয় করে চারা তৈরী করে নেওয়া। তবে আমরা অনেকেই বীজ ক্রয় করে পড়ে যাই আরেক বিপাকে,,, চারা তৈরী করার সঠিক পদ্ধতি কি তা জানা নাই। মরিচ, বেগুন বা এ জাতীয় বীজগুলো খুবই ক্ষুদ্র, সেন্সিটিভ, তাই একটু ভুলের কারনে আপনার মূল্যবান বীজের জার্মিনেশনের হার ৫০% এর নিচে চলে আসতে পারে। বীজতলা তৈরি ও চারার পরিচর্যা কিভাবে করবেন, সেই সম্পর্কে নিচে ধারণা দেওয়া হলো।
বীজতলা তৈরীতে যে সকল বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে
- বীজতলার জন্য কেমন জায়গা নির্বাচণ করবো?
- কতো বড়ো জায়গা জুড়ে বীজতলা হবে?
- মাটি শোধণ কীভাবে করবো?
- বীজতলা কীভাবে প্রস্তুত করবো?
- কী কী সার দিব?
- বপনের আগে বীজ কীভাবে প্রস্তুত করবো?
- বীজ কতুটুকু গভীরে বপন করবো?
- সারি করে নাকি এলোপাতাড়িভাবে ছিটিয়ে বপন করবো?
- বীজ বপন করে পানি দেব কি দেবো না?
- উপরে কীভাবে বা কী দিয়ে মালচিং দেব?
- কত দিন পর মালচিং খুলে দেব?
- চারা গজানোর পর কি কি স্প্রে করবো?
- দ্বিতীয় বীজতলার প্রয়োজন আছে কি না?
- কতো দিন পর চারা রোপন করবো? ইত্যাদি ইত্যাদি!!
আসুন আমরা, বীজতলা তৈরি ও চারার পরিচর্যা, সংক্ষেপে আলোচনা করি।
-
Product on saleহাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া – ঢাকা ১ Dhaka 1 (Sweet pumpkin)Original price was: 280.00৳ .230.00৳ Current price is: 230.00৳ .
-
ইউনাইটেড ৫৫ হাইব্রিড ভুট্টা United 55 hybrid maize820.00৳
-
Product on saleহাইব্রিড পেঁপে বাবু Hybrid Papaya Babu (১ গ্রাম)Original price was: 630.00৳ .550.00৳ Current price is: 550.00৳ .
-
Product on saleহাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া ব্ল্যাক স্টোন Pumpkin Black Stone (১০ গ্রাম)Original price was: 350.00৳ .280.00৳ Current price is: 280.00৳ .
জায়গা নির্বাচনঃ–
বীজতলার জন্য অবশ্যই অবশ্যই ছায়া মুক্ত উচু যায়গা নির্বাচন করতে হবে। ছায়ামুক্ত রোদ্রজ্জ্বল জায়গায় গাছ অস্বাভাবিক লম্বা ও দুর্বল হবে না। মাটিতে ক্ষতিকর অনুজীবের উপস্থিতি থাকবে না। গাছ তেজ-দ্বিপ্ত ও বলিষ্ঠ্য এবং রোগমুক্ত হবে। উচু জায়গা হলে খরিপ মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে চারা নষ্ট হওয়ার ভয় থাকবে না।
বীজতলার আকারঃ-
পরিচর্যার সুবিধার্থে আদর্শ বীজতলার মাপ দেয়া হয়েছে ১ মিটার প্রস্থ ও ৩ মিটার দৈর্ঘ। অর্থাৎ ৩ ফিট × ১০ ফিট। চার সাইডে মাপ করে চারটি খুটি পুতে দড়ি টেনে সহজে সোজা মাপ করা যায়। এ পরিমান জায়গায় ৫ থেকে ১০ গ্রাম বেগুন, মরিচ, টমেটো, কপিসহ এ ধরণের বীজ বপন করা হয়ে থাকে। বীজের পরিমান অনুযায়ী দৈর্ঘ বাড়াতে বা কমাতে পারবেন।
মাটি শোধনঃ-
মাটিতে নোমাটোডা/কৃমি বা বহু ক্ষতিকর অনুজীব থাকে। এরা চারা গাছে আক্রমণ করলে পরবর্তিতে ঢলে পড়াসহ আরো বহু রোগ হয়ে কৃষকের স্বপ্নটা একটি দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। তাই মাটি শোধন করে নিতে হয়। মাটি শোধন কাজটা সহজ নয়। ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। রাসায়নিক পদ্ধতির মেডিসিন দুষ্প্রাপ্য। তবে আমাদের জন্য একটা মাগনা ও সহজ উপায় আছে।
আর সেটা হচ্ছে… সাদা উজ্জ্বল পলিথিন দিয়ে নির্দিষ্ট্য মাটি ৩-৪ সপ্তাহ ভালোভাবে বায়ু রোধ করে ঢেকে রাখতে হবে। সূর্যের প্রচন্ড উত্তাপে ভেতরের জীবাণু মারা যাবে। প্রজেক্ট খুব ছোট হলে সারা দিন রোদ পড়ে এমন জায়গা বেছে নিলে মাটি শোধন না করলেও হবে, তবে মেডিসিন দিয়ে মাটি শোধন করে নিলে আপনি সেফ থাকতে পারবেন। বীজ বপনের ৫-৭ দিন আগে কপার অক্সিক্লোরাইড স্প্রে করে মাটি ভালোভাবে ভিজিয়ে নেয়া যায়।
বীজতলা প্রস্তুতকরণঃ-
নির্দিষ্ট জায়গা চাষ দিয়ে/কোদাল দিয়ে বার বার কুপিয়ে ঢিলগুলো একেবারে গুড়ো করে নিতে হয়। অনেকে বীজতলার মাটি চালুনি দ্বারা চেলে নেন। এটা খুবই উত্তম পদ্ধতি। ইটের গুড়া (সুড়কি) চালার জন্য ব্যবহৃত তারের নেট দিয়ে চালুনি তৈরী করে নেয়া যেতে পারে। শীতকালের জন্য বীজতলা সামান্য (৪-৫ আঙ্গুল) উচু এবং বর্ষাকালে একটু বেশি (৮-১০ আঙ্গুল) উচু করে প্রস্তুত করতে হবে। বীজতলার মাটি নরম করার জন্য মাটিতে বালু মেশানো যেতে পারে।
সার প্রয়োগঃ-
বীজতলায় রাসায়নিক সার মোটেও দেয়া যাবে না। তবে জৈব সার ১০×৩ ফিট বীজতলায় ২-৩ কেজী হারে প্রয়োগ করা উত্তম। এর সাথে ২০-৩০ গ্রাম কার্বোফুরান দিতে হবে। তবে মাটি একেবারে অনুর্বর হলে বীজ বপনের ২-১ সপ্তাহ আগে সামান্য পরিমানে পটাশ ও টিএসপি সার ভালোভাবে মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে।
বীজ প্রস্তুতিঃ-
বীজের ভালো অঙ্কুরোদের জন্য বীজ প্যাকেট থেকে বের করে প্রথমে ২০-৩০ মিনিট রোদ্রে রাখতে হবে। এর পর ২০-৩০ মিনিট ছায়ায় রেখে ঠান্ডা করে নিতে হবে। এবার ১০-১২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এবার লিটারে ২ গ্রাম হারে কার্বেন্ডাজিম পানিতে ১০-১৫ মিনিট ভিজিয়ে বীজ শোধন করে নিন। কয়েকদিন ভেজা বস্তা/গরম কাপড়ে জাগ দিয়েও রাখতে পারেন। তার পর বীজ বপনের সময় পানি পৃথক করে ৫ মিনিট ছায়ায় রেখে বীজের পানি শুকিয়ে নিন। বপনের সুবিধার্তে ক্ষুদ্র বীজের সাথে কিছু শুকনো মাটির গুড়ো মিক্স করা যায়। তাহলে বীজ বপনের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলো।
বীজ বপনঃ-
বীজ সারি করেও বপন করতে পারেন, আবার এলোপাতাড়িভাবে ছিটিয়েও বপন করতে পারেন, আপনার ইচ্ছা। সারি করে বপন করলে ৫ আঙ্গুল পর পর বাশের খোচা বা অন্য কিছুর সাহায্য সামান্য গভীর নালা করে তাতে সুবিন্যাস্তভাবে বীজ ফেলতে হবে। সারি করে বীজ বপনে গাছগুলো পরিপাটি ও সুন্দরভাবে একই সাথে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে। চারা সংগ্রহেও খুব সুবিধা হবে।
মরিচ, বেগুন বা এ জাতীয় বীজগুলো খুবই ক্ষুদ্র ও সেন্সিটিভ। এগুলো মাটিতে ফেলে উপরে সামান্য গুড়ো মাটি দিয়ে কোন রকম ঢেকে রাখতে হবে। বীজ মাটির উপরে থাকলেও শেকড় গজাবে না, আবার মাটির বেশি গভীরে গেলেও তা মাটি ভেদ করে বের হতে সমস্যা হবে। ছোট ঢিলে চাপা পড়লে গাছ বের হতে পারবে না। তাই খুবই সাবধাণতার সাথে কাজ করতে হবে।
বীজ বপন করে পানি দেয়াঃ-
মাটি যদি ভেজা থাকে, তাহলে বীজ বপনের পর পানি দেয়ার কোন প্রয়োজন নাই, গাছ বের হওয়ার আগ পর্যন্ত মাটিকে জো অবস্থায় রাখতে হবে। বরং পানি দিতে গিয়ে চটা বাধলেই সমস্যা হয়ে যাবে। আর মাটি যদি শুকনো থাকে, তাহলে খুব সাবধাণতার সাথে পানি দেয়া যায়। খেয়াল রাখতে হবে… পানি দেয়ার সময় মাটি যেনো নড়াচড়া বা গর্ত না হয়ে যায়। এর জন্য স্প্রেয়ারের সাহায্য নিতে পারেন। গাছ বের হয়ে গেলে নিয়মিত পানি দিতে হবে।
মালচিংঃ-
মাটি গরম রাখা এবং রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা করার জন্য মালচিং দেয়া হয়। বীজ বপনের পর সাধারণত বীজতলা খড় দিয়ে ১ ইঞ্চি পুরু করে ঢেকে দেয়া হয়। এর পর উপরে পানি ছিটিয়ে দেয়া হয়। এতে মাটি গরম থাকে, উপরের পৃষ্ঠ রোদ্রে শুকাতে পারে না, জার্মিনেশন ভালো হয়। এ ধরনের মালচিং গাছ বের হওয়ার সাথে সাথে সরিয়ে ফেলতে হয়। বর্তমানে পলিথিন দিয়ে তাবু করা হয়। বাঁশের ফালি দিয়ে বীজতলার উপর ধনুকের মতো বাকিয়ে ফ্রেম তৈরী করে তার উপর সাদা পলিথিন দিয়ে সম্পূর্ণ ঢেকে রাখতে হয়।
এতে ভেতরে সূর্যের তাপ প্রবেশ করে, বের হতে পারে না। তাই মাটি গরম হলে দ্রুত জার্মিনেশন হয়। গরমে গাছের গ্রথও ভালো হয়। শীতকালে এ পদ্ধতি ভালো ফলদায়ক হয়। গাছ বের হওয়ার পর এটা দিনে কিছু সময় খুলে রাখতে হয়। ২৪ ঘন্টাও দিয়ে রাখা যায়, তবে পচনজাতীয় কোন সমস্যার আভাস পেলে খুলে রাখতে হবে। এর দ্বারা সুধু রোদ-বৃষ্টি আর ঠান্ডাই নয়, কুয়াশা, পোকা-মাকড়, রোগ-বালাই, মুরগী, ছাগল, কুকুর, শেয়াল, ইদুর ইত্যাদি সকলের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
চারায় স্প্রে করাঃ-
দুই পাতা নিয়ে সকল চারা গজিয়ে উঠলে ভালো কোম্পানির কার্বেন্ডাজিম ২ গ্রাম/লিটার হারে স্প্রে করে দিতে হবে (এজন্য আপনি ভালো মানের স্প্রেয়ার ক্রয় করতে পারেন)। ছোট চারা খুবই নাজুক। তাই কড়া কোন কিছু ভুলেও স্প্রে করা উচিৎ হবে না। পিঁপড়ার আক্রমন বেশি হলে হালকাভাবে সাইপারমেথ্রিন বা ক্লোরপাইরিফস দিতে হবে।
দ্বিতীয় বীজতলাঃ-
চারার বয়স ১০-১২ দিন হলে তা দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তর করা যায়। এতে গাছের শেকড় বৃদ্ধি ও মজবুত হয়। গাছ সবল হয়। এর জন্য ২ সে.মি. দুরত্বে বাশের খোচা দিয়ে সরু গর্ত করে গাছ বসিয়ে দিতে হয়। সাধারণত ছিটিয়ে বীজ বপন করার সময় কোন কোন জায়গায় ঘন গাছ বের হয়। ঘন জায়গা থেকে কিছু কিছু করে গাছ তুলে নিয়ে তা দ্বিতীয় বেডে স্থানান্তর করতে হবে। এতে আপনার প্রতিটা গাছ সুস্থ-সবল হবে ও চারা নষ্ট হবে না। চারা স্থানান্তরের পর পানি দিতে হবে এবং উপরে ছাওনি দিয়ে রোদ থেকে রক্ষা করতে হবে।
বীজতলায় কখনও আগাছা রাখা যাবে না। আগাছা দেখা দিলে খুব সাবধানে তুলে ফেলতে হবে। আগাছা তুলতে গিয়ে গাছের যাতে কোন ক্ষতি না হয়, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।
চারা রোপনের সময়ঃ-
চারা গাছে ৫-৬ টি পাতা বের হলেই তা রোপনের উপযুক্ত হয়। সাধারণত বেগুন, মরিচ ইত্যাদি গাছ রোপনের উপযুক্ত হতে ৩৫-৪০ দিন সময় লাগে। ফুলকপি, বাধাকপি, ওলকপি ইত্যাদি গাছ জার্মিনেশনের ২৫-৩০ দিনেই রোপনের উপযুক্ত হয়ে যায়। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে গাছের বয়স খুব বেশি হয়ে গেলে তা পরবর্তিতে আশানুরূপ ফলনের অন্তরায় হয়। তবে চারা রোপনের জন্য উঠানোর সময় তার সহ্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রায় ১ সপ্তাহ পানি সেচ বন্ধ রাখতে হবে।
সূর্যের আলোয় উন্মুক্ত রাখতে হবে। চারার গ্রোথ বন্ধ রাখতে হবে। এতে চারা শক্ত ও পরিপুষ্ট এবং সহনশীল হবে। চারার ভেতরে কার্বোহাইড্রেট জমতে থাকবে যা রোপনের পর দ্রুত শেকড় গজানোর কাজে আসবে। পরিশেষে বলতে চাই, একটি ছোট চারার মাঝেই আপনার স্বপ্ন ও সফলতা লুকিয়ে আছে। তাই সেই চারাটিকে সতেজ ও সবল করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিৎ।
তবে চারা তোলার কয়েক ঘন্টা আগে পানি দিয়ে মাটি নরম করে নিতে হবে। চারা মুল জমিতে রোপনের আগে প্রতি লিটার পানিতে দেড়-দুই গ্রাম হারে ব্যাকটাফ অথবা অন্য কোন ব্যকটেরিয়া নাষক দিয়ে শোধন করে নিতে হবে।
বীজতলা তৈরি ও চারার পরিচর্যা সম্পর্কে আমরা সঠিক ভাবে জেনে কাজ শুরু করবো। তাহলে আমরা ক্ষতির হাত থেকে বাঁচবো ও লাভবান হবো।
লেখক
মোঃ মহিউদ্দিন অনিক
রাজশাহী