মাছ চাষে মানসম্মত পোনার ভুমিকা অপরিসীম। হ্যাচারি থেকে রেণু পোনা সংগ্রহ করে তা লালন পালন করার জন্য পুকুরে রেখে ৫-১০ সেঃমিঃ বা ৭-১২ সেঃমিঃ পর্যন্ত বড় করে চাষের পুকুরে ছাড়ার পদ্ধতিকেই রেণু পোনা চাষ পদ্ধতি বলে। মাছ চাষের পূর্বশর্ত হচ্ছে সুস্থ্য সবল উন্নত জাতের পোনা সরবরাহ নিশ্চিত করা।
রেণু অবস্থায় মাছের জীবন চক্র অত্যন্ত নাজুক থাকে। এজন্য আলাদাভাবে বিশেষ যত্নে পালনের জন্য রেণু সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। সাধারণত দুই ভাবে রেণু পোনা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। একটি উৎস হচ্ছে নদী অন্যটি হ্যাচারি। হালদা, পদ্মা, যমুনা, আড়িয়াল খাঁ প্রভৃতি নদী থেকে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বিভিন্ন মাছের রেণু ধরা পড়ে।
ভালো রেণু পোনা
ভালো রেণু বা মানসম্মত রেণু কোথায় পাওয়া যাবে তা কিভাবে পাওয়া যাবে এটা অনেকেরই প্রশ্ন থাকে। এবং নদী নালা থেকে প্রাপ্ত বা প্রাকৃতিক উৎস থেকে আহরিত রেণু পোনা ভালো নাকি হ্যাচারির উৎপাদিত রেণু পোনা ভালো এটাও অনেকেরই প্রশ্ন। স্বাভাবিকভাবেই নদী থেকে প্রাপ্ত রেণু পোনার মান ভাল হয়ে থাকে কারণ পরিপূর্ণ এবং অনুকুল প্ররিবেশে পরিপক্ক মাছের প্রজনন ঘটে থাকে নদীতে।
নদীর আহরিত রেণুতে বিভিন্ন প্রজাতির মিশ্রণ থাকে তাই বাছাই করা সহজ হয় না বলে এ ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। অন্যদিকে হ্যাচারির রেণুতে প্রজাতির মিশ্রন না ঘটিয়ে নিদিষ্ট প্রজাতির রেণু সংগ্রহ ও লালন-পালন করা সম্ভব হয়ে থাকে। তবে ব্রুড মাছের মান ঠিক মত নিয়ন্ত্রন না করা হলে এবং হ্যাচারি ব্যাবস্থাপনায় অসতর্ক হলে নিম্নমানের রেণু বা সংকর জাতের রেণু উৎপাদিত হতে পারে। যা পরে চাষীর ক্ষতির কারণ হতে হবে।
-
মাছের প্রোবায়োটিক্স: AQUA PRO PLUS !! একুয়া প্রো প্লাস- ৫০০ গ্রামProduct on sale850.00৳
-
জেট এয়ারেটর- Jet Aerator- পুকুরের অক্সিজেন মেকারProduct on sale41,500.00৳
-
সুপার এয়ারেটর- Super Impeller AeratorProduct on sale43,500.00৳
-
প্যাডেল হুইল (শুধু মাত্র পাখা) Only Paddle WheelProduct on sale2,850.00৳
রেণু লালন পালনের পুকুর প্রস্তুত
রেণু পোনা লালন পালনের জন্য বিভিন্ন ধরনের অগভীর বার্ষিক পুকুর বা চাষাবাদ মৌসুমে পানির ব্যবস্থা থাকে এমন পুকুর রেণু লালনের জন্য উত্তম। রেণু মজুদ পুকুর সংলগ্ন বা পার্শ্ববর্তী স্থানে অপেক্ষাকৃত ঢালু এবং যে স্থানে সবসময় পানি প্রাপ্তির সুবিধা আছে এমন স্থানে রেণু প্রতিপালনের পুকুর নির্মাণ করা ভাল। পোনার চাহিদা অনুযায়ী কয়েকটি মজুদ পুকুরের পাশে রেণু প্রতিপালনের পুকুর তৈরি করলে বেশি লাভবান হওয়া যায়।
প্রতিপালন স্থানের অবকাঠামো
রেণু পোনা প্রতিপালন পুকুর নির্বাচনে যে বিষয় গুলোর উপর খেয়াল রাখতে হবে-
- পুকুরের চারপাশ উচু, মজবুত থাকতে হবে
- পুকুর বন্যামুক্ত হতে হবে
- পুকুরে পর্যাপ্ত রোদ, আলো-বাতাস থাকবে
- পুকুরে ছায়া সৃষ্টি করে কিংবা পাতা পানিতে পড়ে পানি নষ্ট হয় এমন কোন গাছপালা পুকুরপাড়ে থাকা যাবেনা
- বর্ষাকালে পুকুরের পানির গভীরতা দুই মিটারের বেশি হওয়া যাবে না
- পুকুরের তলদেশে বেশি পরিমানে কাঁদা থাকবে না
- রেণু প্রস্তুতের পুকুরের আয়তন ১০-১৫ শতাংশ হতে পারে।
চুন সার প্রয়োগ
পুকুর প্রস্তুতির দ্বিতীয় ধাপে পুকুরের তলদেশের মাটি সূর্যালোকে শুকিয়ে গেলে পুকুরের তলদেশে লাঙ্গল দিয়ে ভালভাবে চাষ করে শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে চুন পাড়সহ সমস্ত পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় পুকুরের তলদেশের পরজীবি প্রাণী মারা যায় এবং পুকুরের পানি কিছুটা খারযুক্ত হয়। যদি পানি নিস্কাশন না করে রোটেনন প্রয়োগ করা হয় তাহলে রোটেনন প্রয়েগের ৩-৫ দিন পর চুন দিতে হবে।
নতুন ও পুরাতন উভয় পুকুরেই সার দিতে হবে প্রথমে রাক্ষুসে মাছ অপসারণ বা সম্ভব হলে শুকানের পর শতাংশ প্রতি ৫-৭ কেজি গোবর বা ৮-১০ কেজি কম্পোস্ট সার অথবা হাঁস মুরগির বিষ্ঠা ৩-৫ কেজি এবং ১০০-১৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০-৭৫ গ্রাম টিএসপি একই সঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি তিনমাস পরপর চুন প্রয়োগ করলে পুকুরের স্বাস্থ্যকর অবস্থা বজায় থাকে। এক্ষেত্রে চুনের মাত্রা হবে প্রাথমিক মাত্রার ১/৪ ভাগ থেকে ১/২ ভাগ।
পুকুরে পানি সেচ দেওয়া
পুকুর শুকানো হলে চুন প্রয়োগের ২-৩ দিন পর পুকুরে নিরাপদ উৎস থেকে ২-২.৫ ফুট পরিমাণ পানি প্রবেশ করাতে হবে। পানি উত্তোলেনের ক্ষেত্রে গভীর নলকুপের বা শ্যালো ইঞ্জিনের দ্বারা মাটির নীচের পানি প্রবেশ করানো ভালো।
যদি পুকুর বা অন্য ডোবা থেকে পানি প্রবেশ করানো হয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই আগে পাইপের মুখে ফিল্টার নেট বা নালায় জাল দিয়ে পানি ছেঁকে প্রবেশ করাতে হবে, যাতে এ পানির সঙ্গে অন্য কোনো জলজ প্রাণী, কীতপতঙ্গ, রাক্ষুসে ও অচাষকৃত মাছ প্রবেশ করতে না পারে।
ক্ষতিকর জলজ কীতপতঙ্গ দমন
নার্সারি পুকুরে সার প্রয়োগের ৩-৪ দিনের মধ্যেই পানির বর্ণ সবুজ হয় এবং প্লাংক্টনসহ অন্যান্য বেশকিছু প্রজাতির ক্ষতিকর জলজ কীতপতঙ্গ জন্মায়। যেমন- হাঁসপোকা, ব্যাঙাচী, ক্লাডেসিরা, বড় প্রানীকনা (মাখন পোকা) ইত্যাদি।
এসব কীতপতঙ্গ থাকলে রেণুর মড়ক হয়, রেণু পোনা খেয়ে ফেলে অথবা পেটকেটে মেরে ফেলে এবং খাদ্যের জন্য রেণুর সাথে প্রতিযোগিতা করে। এজন্যই রেণু ছাড়ার আগে এদের নিয়ন্ত্রন করতে হবে।
৬-১২ গ্রাম শতাংশ প্রতি ৩০ মে.মি. পানি হিসাবে ডিপটারেক্স ব্যবহার করতে হবে তাহলে হাঁসপোকা, ব্যাঙাচী, ক্লাডেসিরা, বড় প্রানীকনা (মাখন পোকা) কপিপোড ইত্যাদি মারা যাবে। কিন্তু রেণু পোনার খাদ্য রটিফার ঠিকই বেঁচে থাকবে।
এছাড়া পুকুরে প্রতি শতাংশে ১২০-১৩০ মিলি হারে কেরোসিন বা ডিজেল প্রয়োগ করলে জলজ কীতপতঙ্গ আংশিক দমন পাওয়া যায়। জলজ কীতপতঙ্গ দমনের জন্য ডিপটারেক্স ব্যবহারের পর জাল টেনে মরা পোকা ছেঁকে তুলে দিতে হবে।
রেণু পোনা মজুদ
রেণু পালনের সময়কাল এবং পুকুরের আয়তনের উপর ভিত্তি করে রেণু মজুদের ঘনত্ব নির্ভর করে। রেণু থেকে চারা পোনা (৭-১৫ সে.মি.) পর্যন্ত একই পুকুরে বড় করার পদ্ধতিকে এক স্তর পদ্ধতি বলে।
আবার যদি একটি ছোট পুকুরে রেণু পোনা ছেড়ে ১০-১৫ দিন লালন পালন করে অন্য কয়েকটি পুকুরে কম ঘনত্বে ধানি পোনা স্থানান্তর করা হয়, তাহলে সে পদ্ধতিকে দ্বি-স্তর পদ্ধতি বলে।
প্রথম পদ্ধতি থেকে তিনগুন বেশি রেণু পোনা মজুদ করা যায়। একস্তর পদ্ধতিতে রেণু পালনের জন্য শতাংশে ৬-৮ গ্রাম ও দ্বি-স্তর পদ্ধতির জন্য ২৫-৩০ গ্রাম রেণু পোনা মজুদ করা সম্ভব।
সর্তকতা
রেণু পরিবহনকালীন সময় অক্সিজেন ব্যাগে বহন করতে হবে এবং পরিবহনের সময় ধকল যত কম হবে, রেণু পোনার মৃত্যুর হার তত কম হবে। পুকুরে রেণু ছাড়ার আগে রেণুর ব্যাগের পানির এবং পুকুরের পানির তাপমাত্রা সমতায় নিয়ে আসতে হবে। রেণু ছাড়ার সময় পুকুরের পাড়ের কাছাকাছি ছাড়তে হবে। রেনু ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় সকালে বা বিকালে ছাড়া উচিত ।
উপরোক্ত বিষয় গুলি ভাল ভাবে মেনে রেণু পোনা চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করলে চাষী লাভবান হবে।