1
হাইসান-৩৩ হাইব্রিড সূর্যমুখী ফুল চাষ পদ্ধতি Hysan-33-Hybrid-Sunflower-C

সূর্যমুখী অতিপরিচিত একটি ফুল। এর তেল মানে-গুণে অনন্য। সারাবিশ্বেই এর ব্যাপক চাহিদা থেকে এদেশেও বাণিজ্যিকভাব সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয় ষাটের দশকে। বর্তমানে, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর, পাবনা, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলাগুলোতে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে।

ক) সূর্যমুখীর বীজ পশুখাদ্য হিসেবে হাঁস মুরগিকে খাওয়ানো হয়।

খ) এই বীজ যন্ত্রে মাড়াই করে তেল বের করা হয় ৷তেলের উৎস হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সূর্যমুখীর ব্যাপক চাষ হয়।

গ) ঘিয়ের বিকল্প হিসেবে সূর্যমুখীর তেল ব্যবহৃত হয়, যা বনস্পতি তেল নামে পরিচিত।

ঘ) সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য রান্নার তেল হতে ভাল এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যন্ত কম। এছাড়া এতে ভিটামিন এ, ডি ও ই রয়েছে।

ঙ) ভিটামিন-ই এর উত্তম উৎস হলো এই সুর্যমুখী ফুলের বীজ।

চ) ভিটামিন-ই এর অনেক উপকারী দিক রয়েছে। ভিটামিন ‘ই’ এর ফ্রী র‌্যাডিক্যাল প্রতিরোধী বা এ্যান্টি অক্সিডেন্ট ভূমিকাই কাজ করে। ভিটামিন ‘ই’এর ক্ষমতার মধ্যে আরও দুটো বৈশিষ্ট্য অর্ন্তভুক্ত করা যায় যেগুলো হৃদরোগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উপকারী ভূমিকা পালন করে। এ দুটো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রদাহ নিবারণ ও মসৃণ মাংস পেশীর কোষ প্রবৃদ্ধিতে সাহায্য করা। মাংস পেশীর কোষ উৎপাদন ক্ষমতার সাথে সাথে প্রদাহ নিবারণ ক্ষমতা এ দুটো গুণ রক্তনালীর সংকীর্ণ হওয়াকে প্রতিরোধ করে। ভিটামিন ‘ই’ এর ক্যান্সাররোধী গুণাবলীর কথাও জানা গেছে।

সূর্যমুখী ফুল চাষের উপযুক্ত সময়ঃ

সূর্যমুখীর চাষ মূলত অগ্রহায়ণে করা হয় ভাল ফলন লাভের আশায়। সূর্যমুখীর চাষ সারা বছর করা যায়। তবে অগ্রহায়ণ মাসে চাষ করাই উপযুক্ত সময়। দেশের উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রী সে. এর নিচে হলে ১০-১২ দিন পরে বীজ বপন করতে হয়। খরিফ-১ মৌসুমে অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ (মধ্য-এপ্রিল থেকে মধ্য-মে) মাসেও এর চাষ করা যায়।

জমি তৈরিঃ

সূর্যমুখীর জমি গভীরভাবে চাষ দিতে হয়। জমি ৪-৫ বার আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।

সূর্যমুখী ফুলের জাত নির্বাচনঃ

১৯৮২ সালে জার্মপ্লাজম হতে বাছাইয়ের মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয় কিরণী (ডিএস-১) জাতটি। এই জাতের গাছ ৯০-১১০ সে.মি. লম্বা হয়। বীজের ওজন হাজারপ্রতি ৬০-৬৫ গ্রাম। বীজের আকৃতি লম্বা ও চ্যাপ্টা হয় এবং কালো রঙ এর হয়। প্রতি গাছে একটি করে ফুল আসে। বীজ বপনের পর ফসল সংগ্রহ করতে প্রায় তিন মাস সময় লাগে। হেক্টরপ্রতি ১.৫ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। ফসল সংগ্রহ করতে প্রায় ৯০-১০০ দিন সময় লাগে।

তবে ইদানীং সারা দেশ ব্যাপি ব্র্যাক সিডের আমদানিকৃত ও বাজারজাতকৃত হাইসান-৩৩ (হাইব্রিড) জাতটি কৃষক ভাইদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে কেননা এই জাতের সূর্যমুখির ফলন অন্যান্য জাতিগুলোর চাইতে প্রায় দ্বিগুণ।আগাম একটি জাত, ১১০-১১৫ দিনে ফসল তোলা যায়, প্রতি একরে ফলন ১.৫-২.৫ মেঃটন পর্যন্ত। সবচাইতে ভালো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জাতটি রোগ বালাই প্রতিরোধী একটা জাত এবং অধিকফলনশিল যার কারণে কৃষক ভাইদের এতো চাহিদা।

বপন পদ্ধতি ও বীজের হারঃ

বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্যে সূর্যমুখীর বীজ সারি সারি করে বোনা হয়। সারি সারি ৫০ঃ৫০ ও কলামে ২৫ঃ২৫ দূরত্বে বীজ বপন করা হয়। এতে হেক্টরপ্রতি ৮-১০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।

সার প্রয়োগঃ

একর প্রতি সারের আনুমানিক পরিমাণ।

  • ইউরিয়া ৪৫০-৫০০ কেজি,
  • টিএসপি ৩৭০ কেজি,
  • এমপি ৩০০-৩৭০ কেজি,
  • ব্র্যাক জিপসাম ২৫০,
  • ব্র্যাক জিংকঃ ০৩ কেজি,
  • ব্র্যাক বোরনঃ ০৩ কেজি,
  • ব্র্যাক ম্যাগনেসিয়ামঃ ০৬ কেজি,

ইউরিয়া সার অর্ধেক করে এবং বাকি সব সার শেষ চাষের সময় জমিতে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া সার দুই ভাগে দিতে হবে। প্রথম ভাগ চারা গজানোর ২০ দিন পর এবং দ্বিতীয় ভাগ ৪০ দিন পর বা ফুল ফোটার আগে আগে প্রয়োগ করতে হবে।

ফসল সংগ্রহঃ

বপন করার পর পরিপক্ক হতে ৯০ থেকে ১১০ দিন প্রয়োজন।


লেখক

মোঃ আনিছুর রহমান

আরএসএম,ব্র্যাক সিড

হবিগঞ্জ।


1 Comment

  1. mijan October 17, 2023 Reply

    এক একরে এত পরিমান রাসায়নিক সার দিলে জমি তো একেবারেই তামা হয়ে যাবে😪 কেমন কৃষিবিদ যে জৈব সার ব্যবহারের পরামর্শ না দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার দিতে বলেছেন😭

Leave a Comment

Your email address will not be published.

0

TOP

X