3
পেস্টিসাইড চেনার সহজ উপায়

পেস্টিসাইড গ্রুপ চেনার প্রয়োজনীয়তা। বাংলাদেশে প্রায় ৩৫০-৪০০ টি কোম্পানির বালাইনাষক বিক্রি হয়। প্রতিটা কোম্পানির বালাইনাষকের নাম ভিন্ন ভিন্ন। আবার একেক অঞ্চলে একেক কোম্পানির বালাইনাষক ব্যবহার হতে দেখা যায়। যদি প্রতিটা কোম্পানির গড় ৩০ টি করে বালাইনাষক ধরা হয়, তাহলে সংখ্যাটি

দশ হাজার অতিক্রম করবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে… একজন কৃষক অথবা সাধারণ ব্যক্তি এতগুলো বালাইনাষক বিষয়ে কীভাবে ধারনা রাখতে পারবে? কারো পক্ষে কি সম্ভব, এতগুলো কীটনাষক বিষয়ে জ্ঞান রাখা? যারা বালাইনাষক সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, এই অসংখ্য ভ্যরাইটি দেখে নিঃসন্দেহে ভয় পেয়ে যাবে। খুব কঠিন কিছু মনে করবে। তবে প্রকৃত বিষয়টা ঠিক এর বিপরীত। বালাইনাষক চেনা ও এ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের খুব সহজ উপায় আছে। আর সেটি হচ্ছে…. অষুধের গ্রুপ চেনা। মূলত আমরা এই হাজার হাজার বালাইনাষকের মধ্যে খুব কম সংখ্যক অষুধই বেশি ব্যবহার করে থাকি। কারন- সারা দেশে বিভিন্ন কোম্পানির বালাইনাষকের হাজার হাজার নাম দেয়া থাকলেও এগুলোর গ্রুপ মূলত খুব কম সংখ্যক। নাম ভিন্ন হলেও প্রতিটা কোম্পানির বালাইনাষক প্রায় একই গ্রুপের হয়ে থাকে যা আমরা গ্রুপ চেনার মাধ্যমে সহজেই জেনে নিতে পারি। তাই একজন কৃষক যদি এই হাজার হাজার ভ্যারাইটির মধ্যে বহুল ব্যবহৃত মাত্র ১০-১৫ টি কীটনাষক, ৫-৭ টি ছত্রাকনাষক এবং কয়েকটি সার বা অনুখাদ্যে সম্পর্কে ভালোমতো জেনে নিতে পারে, তাহলে সে নিজের সমস্যা সমাধানের পর যে কোন কৃষককে অনায়াসে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করতে পারবে। যে কোন কোম্পানির নতুন নামধারী প্রডাক্ট হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গে গ্রুপ দেখে সেটি চিনে নিতে পারবে।

উদাহরনত:-

বহুল ব্যবহৃত একটি কীটনাষক গ্রুপের নাম হচ্ছে- #এমামেকটিন_বেনজয়েট”। এটি মূলত বেগুন, শিম, মরিচ সহ সকল প্রকার গাছের ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকা এবং যে কোন গাছের পাতা, লতা ও ফুল-ফল কুরে খাওয়া পোকা দমনে চমৎকার কাজ করে থাকে। তবে সমস্যা হলো…. এই একই অষুধ যখন ৫০ টি কোম্পানি থেকে মার্কেটে ছাড়া হবে- কাজ একই হলেও সেগুলোর ৫০ টি ভিন্ন ভিন্ন বানিজ্যিক নাম হবে৷ তাহলে এখন বলেন… এই ৫০ টি নাম মনে রাখা সহজ হবে নাকি একটি গ্রুপ নাম মনে রাখা সহজ হবে? হ্যা, একটি মাত্র গ্রুপ নাম মনে রেখেই ৫০ টি বানিজ্যিক নাম চেনা সহজ হবে৷ তাই সর্বপ্রথম আগে গ্রুপটি চিনতে হবে এবং গ্রুপটির বৈশিষ্ট্য এবং কাজ জেনে নিতে হবে। তাহলে এই গ্রুপের অষুধ আরো ১০০ টি কোম্পানি থেকে নতুন নামে, নতুন মোড়কে বাজারে ছাড়লেও সুধু গ্রুপটি দেখেই তাকে চিনে নেয়া যাবে। উদাহরণত- নিচে এমামেকটিন বেনজয়েট গ্রুপের কয়েকটি বানিজ্যিক নাম এবং ছবি দেয়া হলো।

  • প্রক্লেম- সিনজেনটা
  • প্রটেক্ট- এসি আই
  • সাহাম- ইনতেফা
  • ওয়ান্ডার- মিমপেক্স
  • সাসপেন্ড- হেকেম
  • বারুদ- ইয়ন
  • ইমাকটো- সেমকো
  • হেপিং- এমিন্যান্স
  • নোক্লেম- রেভেন
  • ইমাজিন- আমানা

এভাবে প্রতিটা কোম্পানি থেকে এই গ্রুপের অষুধ তৈরী করে ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে রেখেছে। নাম ভিন্ন হলেও সবগুলো অষুধ যেহেতু “এমামেকটিন” দিয়েই তৈরী করা হয়েছে, তাই এগুলো একই কাজ করবে। তাই আমরা যারা কীটনাষক বা বালাইনাষক বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে আগ্রহী, তাদের জন্য প্রথম কাজ হচ্ছে অষুধের গ্রুপ চেনা।

একটি দুঃখের বিষয় বলতে হয় যে… আমাদের স্থানীয় কিছু কীটনাষক বিক্রেতা এমন আছে যারা কীটনাষকের গ্রুপ বোঝে না। তারা সুধু বানিজ্যিক নাম দিয়েই কাজ চালিয়ে যায়। গ্রুপের নাম বললেও বোঝে না। এমন ক্ষেত্রে আপনি গ্রুপ দেখে চেয়ে নিতে পারবেন।

অনেক সময় ২ টি উপাদান দিয়েও কীটনাষক তৈরী হয়। এক্ষেত্রে সেই দুটি উপাদানের কাজ যদি আপনার জানা থাকে, তাহলে আপনি এর কার্যকারিতা নিজেই বুঝতে পারবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে… কোন কোন গ্রুপ সম্পর্কে জেনে রাখা খুব জরুরী?

বহুল ব্যবহৃত কিছু কীটনাষক গ্রুপের নাম

দেশে বহুল ব্যবহৃত কিছু কীটনাষক গ্রুপের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো। ১. এমামেকটিন বেনজয়েট ২. সাইপারমেথ্রিন+ক্লোরোপাইরিফস (৫৫ ইসি) ৩. ইমিডাক্লোরপ্রিড ৪. কারটাপ ৫. কার্বোফুরান ৫. ল্যামডা-সাইহ্যালোথ্রিন ৬. এবামেকটিন ৭. এসিটামিপ্রিড ৮. ফেনভেলারেট ৯. ম্যালাথিয়ন ১০. ডায়মেথয়েট

বহুল ব্যবহৃত কিছু ছত্রাকনাষক ১. মেনকোজেব ২. কার্বেন্ডাজিম ৩. প্রোপিকোনাজল ৪. টেবুকোনাজল+ট্রাইফ্লক্সিস্ট্রোবিন (নাটিভো) ৫. এজোক্সিস্ট্রোবিন+ডাইফেনোকনাজল (এমিস্টারটপ) ৬. সালফার ৭. কপার

বহুল ব্যবহৃত কিছু আগাছানাষক

১. প্যারাকোয়াট (আগাছা পোড়ানো বিষ) ২. গ্লাইফোসেট (আগাছা পচানো বিষ) ৩. পেন্ডামেথালিন (বীজ পচানো সিলেক্টিভ) যে কোন ধরনের পোকা-মাকড় ও রোগ দমনের জন্য এ কয়টি বালাইনাষকই যথেষ্ট। এগুলোর কার্যকারিতা (Mode of action), এবং কোন ক্ষেত্রে প্রযজ্য সে সম্পর্কে জেনে নিতে পারলে আর কিছুই লাগেনা। তবে স্থানীয় এলাকার উৎপাদিত ফসলের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন বালাইনাষক ব্যবহারের প্রচলন থাকতে পারে। তাই স্থানীয় এলাকায় কী কী অষুধ বেশি ব্যবহৃত হয়, সে বিষয়ে একটু খেয়াল রাখতে হবে। বি:দ্র:- বালাইনাষকের গ্রুপ একই হলে কাজও একই হয়ে থাকে, তবে কোম্পানি যদি লোকাল হয়, তাহলে অনেক সময় তাদের প্রডাক্টের মান কম-বেশি হতে পারে। তাই সব সময় ব্রান্ড কোম্পানির প্রডাক্ট নেয়া উচিৎ। তাহলে কুয়্যালিটিফুল ওষুধ পাওয়া সম্ভব হবে৷

গ্রুপ কীভাবে চিনবো?

যে কোন বালাইনাষকের প্যাকেট অথবা বোতলের গায়ে গ্রুপের নাম দেয়া থাকে। যেমনঃ- প্রতি কেজী “প্রটেক্ট ৫ এস জি” তে ৫০ গ্রাম এমামেকটিন বেনজয়েট আছে। এই ২০ টি গ্রুপ সম্পর্কে ভালোমতো জ্ঞান অর্জন করতে হয়ত ১০ দিন সময়ের প্রয়োজন হবে না। তবে এতে একজন মূর্খ কৃষক শিক্ষিত কৃষকে পরিনত হতে পারবে৷ ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। কল্যাণ কামনা রইলো৷


লেখক

মোঃ মহিউদ্দিন অনিক

রাজশাহী

3 Comments

  1. Jewel ahmed February 25, 2022 Reply

    অসংখ্য ধন্যবাদ,অনেক উপকারী লেখা,যদি কীটনাশক ,বালাইনাশক কোন ফসলের কোন সমস্যায় কোন গ্রুপের ব্যবহার করতে হবে বিস্তারিত লিখলে আরো জ্ঞাণার্জনে সহজ হতো.

    • Masuduj Jaman February 26, 2022 Reply

      ইনশাআল্লাহ আমরা চেষ্টা করবো

  2. Masud rana September 8, 2022 Reply

    Many many tnx

Leave a Comment

Your email address will not be published.

0

TOP

X