2
হাইব্রিড পেঁপে বাবু চাষ পদ্ধতি

পেঁপে এমন একটি ফল যা কাঁচা অবস্থায় সবজি ও পাকা অবস্থায় ফল হিসেবে খাওয়া যায়। এটি সব ধরনের মাটিতেই চাষযোগ্য একটি ফসল। এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা অনেক। লালতীরের হাইব্রিড বাবু পেঁপে চাষ, পুষ্টি,আয় বার মাস।

পুষ্টিমান:
পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি ও আয়রন বিদ্যমান। প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য পাকা পেঁপেতে ৮৮.৪ ভাগ জলীয় অংশ, ০.৭ গ্রাম খনিজ, ০.৮গ্রাম আঁশ, ১.৯ গ্রাম আমিষ, ০.২ গ্রাম চর্বি, ৮.৩ গ্রাম শর্করা, ৩১.০ মি.গ্রা.লৌহ, ০.০৮ মি.গ্রা. ভিটামিন বি-১, ০.০৩ মি.গ্রা. বি-২, ৫৭.০ মি.গ্রা. ভিটামিন সি, ৮১০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন ও ৪২ কিলোক্যালরী খাদ্য শক্তি রয়েছে।

হাইব্রিড পেঁপে বাবু জাতের বৈশিষ্ট্যঃ

অধিক ফলনশীল, আকর্ষণীয়, সামান্য খাঁজযুক্ত এবং ওভাল/লম্বাটে জাত।
প্রতিটি ফলের ওজন ১.৫ -২.৫ কেজি।
শাঁস আকর্ষণীয় হলুদ বর্ণের, অধিক পূরু (৩-৪ সেঃমিঃ)।
খেতে সুস্বাদু ও মিষ্টতার পরিমাণ ১৩-১৪ ভাগ।
স্থানীয় আবহাওয়া বাংলাদেশের সর্বত্র চাষ উপযোগী।
দীর্ঘ দিন ফলন পাওয়া যায়।
কাঁচা ও পাকা উভয়ভাবে বাজারজাত করা যায়।
এই জাতের পেঁপে পাকা অবস্থায় সহজে নষ্ট হয় না। ফলে দূর দুরান্তে সহজেই বাজারজাত করা যায়।
এই জাতের পেঁপে ভাইরাস রোগ সহনশীল।
এই জাতের পেঁপের জীবনকাল ২ বছরের অধিক।

সার প্রয়োগ পদ্ধতি

সারের নাম, পরিমাণ,
(গাছ প্রতি) গর্তে দেয় পরবর্তী পরিচর্যা হিসাবে দেয়া
নতুন পাতা আসলে ফুল আসলে
১ম কিস্তি ২য় কিস্তি ৩য় কিস্তি ১ম কিস্তি ২য় কিস্তি ৩য় কিস্তি
গোবর ১২-১৬ কেজি (৬ কেজি শেষ চাষে) ৬ কেজি – – – – – –
ইউরিয়া ৪৫০-৫৫০ গ্রাম – ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম
টি এসপি ৪৫০-৫৫০ গ্রাম সব – – – – – –
এম পি ৪৫০-৫৫০ গ্রাম – ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম
জিপসাম ২৪৫-২৫০ গ্রাম সব – – – – – –
বোরাক্স ২০-৩০গ্রাম সব – – – – – –
জিংক সালফেট ১৫-২০ গ্রাম সব – – – – – –
*মাটির উর্বরতা ভেদে সার ও তার পরিমাণ কম বেশী হতে পারে।

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যাঃ

পেঁপে বাগান আগাছামুক্ত রাখতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে ১৫-২০ দিন পরপর সেচ দিতে হয়। মাঝে মাঝে মাটি হালকা কুপিয়ে দেয়া ভালো। এ সময় প্রতি গর্তে একটি করে স্ত্রী গাছ রেখে আর সব গাছ সে স্ত্রী হোক বা পুরুষ হোক তুলে ফেলতে হবে। তবে প্রতি ২০টি গাছের জন্য একটি করে পুরুষ গাছ রাখতে হয় যাতে পরাগায়ণে সুবিধা হয়।

পেঁপে ফলের যত্নঃ

পেঁপে গাছের প্রতি পর্বে (Node) ফল আসে। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিপর্বে একটির পরিবর্তে এক সাথে বেশ ক’টি ফল আসে এবং এগুলো যথাযথ বাড়তে পারে না। এসব ক্ষেত্রে ছোট অবস্থাতেই প্রতিপর্বে দু’ একটি ফল রেখে বাকি সব ফল ছিড়ে ফেলতে হয়।

পোকামাকড় ও রোগবালাইঃ

পোকার নাম : পেঁপের মিলিবাগ/ছাতরা পোকা
পোকার স্থানীয় নাম : : ছাতরা পোকা
পোকা চেনার উপায় : ৩-৪ মিলিমিটার আকারের গোলাপি রঙের, ডিম্বাকার, পেটে খাঁজকাটা দাগ আছে। গায়ে সাদা মোমের মতো আবরণ থাকে। পূর্ন বয়স্ক পুরুষ পোকার রং হালকা গোলাপি সাদা।
ক্ষতির ধরণ : দলবদ্ধভাবে ফল,পাতা ও ডালের রস চুষে নেয় ফলে গাছ দুর্বল হয়। পোকার আক্রমণে পাতা, ফল ও ডালে সাদা সাদা তুলার মত দেখা যায়। অনেক সময় পিঁপড়া দেখা যায়। এর আক্রমণে অনেক সময় পাতা ঝরে যায় এবং ডাল মরে যায়।
আক্রমণের পর্যায় : বাড়ন্ত পর্যায়, চারা, পূর্ণ বয়স্ক।
ফসলের যে অংশে আক্রমণ করে : পাতা , ডগা , ফল।
পোকার যেসব স্তর ক্ষতি করে : লার্ভা , পূর্ণ বয়স্ক , কীড়া।


ব্যবস্থাপনা :

আক্রমণ বেশি হলে ইমিক্সট্রিম জাতীয় কীটনাশক ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।
রোগবালাই এর মধ্যে ঢলে পড়া রোগটি প্রধান। এ রোগে প্রচুর চারা গাছ মারা যায়। তাছাড়া এ রোগের জীবাণুর আক্রমণে বর্ষা মৌসুমে কান্ড পঁচা রোগ হয়ে থাকে।

প্রতিকারঃ
১.গাছের গোড়ার পানি নিষ্কাশনের ভাল ব্যবস্থা রাখতে হবে।
২. ইউথেন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭দিন পর পর গাছের গোড়ার চারি পার্শ্বের মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে।
পাউডারী মিলডিউঃ
এ রোগে পাতার উপর এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ফুলের গায়ে ধুসর বা সাদা পাউডারের আবরণ পড়ে। এ রোগে আক্রমনের কারনে ফলন কমে যায়।

প্রতিকারঃ
১। আক্রান্ত গাছের মরা ডাল ও পাতা পুড়ে ফেলতে হবে।
২। প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে ইনসাফ ২ গ্রাম ইউথেন ১৫ দিন অন-র ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যায়।

কান্ড পঁচা রোগঃ
এ রোগ হলে গাছের গোড়ায় বাদামি বর্ণের ভেজা দাগের সৃষ্টি হয় এর ফলে আক্রান্ত – চারা গাছ ঢলে পড়ে এবং মরে যায়।

প্রতিকারঃ
১। আক্রান্ত চারা গাছ উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে।
২। ইউনিজুম ০.২ মি.লি হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত গাছে ছিটিয়ে দিলে সুফল পাওয়া যায়।

মোজাইক রোগঃ
এ রোগ হলে আক্রান্ত গাছের পাতায় সবুজ ও হলুদ রংয়ের দাগ দেখা যায়। পাতা খর্বাকৃতির ও আকারে ছোট হয়। জাব পোকা এ রোগ ছড়িয়ে থাকে।

প্রতিকারঃ
১। আক্রান্ত গাছ উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে।
২। বাহক পোকা দমনের জন্য সাইরাক্স প্রতি লিটার পানিতে ০.২ মি.লি হারে মিশিয়ে ৫-৭ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
৩। জিংকের ঘাটতির জন্য মোজাইক লক্ষণ দেখা দিলে গাছের গোড়ায় গাছ প্রতি ১৫ গ্রাম জিংক সালফেট প্রয়োগ করলে এ সমস্যা দুরীভূত হয়।

এ্যানথ্রাকনোজঃ
ফলের বোটার দিকে গোলাকার দাগ দেখা যায় যা কালো হয়ে পচন ধরে। ইউনিজুম প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করে এ রোগ দমনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

আমাদের দেশের যত পতিত জায়গা আছে যেমন- বাড়ির আঙিনায়, অফিসের সামনে ফাঁকা জায়গায়, বাসার ছাদে, রাস্তার ধারে, যদি আমরা সবাই হাইব্রীড ‘বাবু জাতের’ পেঁপে চাষ করি, একদিকে যেমন আমাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে অন্যদিকে বাড়তি আয় হবে।

2 Comments

  1. মোঃ ওবায়েদউল্লাহ October 8, 2022 Reply

    বীজ অথবা চারা কোথায় পাওয়া যায়

    • Masuduj Jaman October 13, 2022 Reply

      আমাদের কাছে বীজ পাবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published.

0

TOP

X