অনেকের প্রশ্ন… লাউ গাছে প্রচুর কড়া আসে, কিন্তু সেটা বড় হচ্ছে না, মারা যায়। শীতকাল থেকে চৈত্রমাস পর্যন্ত এ সমস্যাটা বেশি হয়ে থাকে।
★ আমরা জানি যে গাছ মাটি থেকে পানি ও পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করে এবং সেটি পাতায় নিয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং সূর্যালোকের উপস্থিতিতে সালোকসংশ্লেষন বা খাদ্য তৈরীর প্রক্রিয়া সংঘটিত হয়।
যেহেতু শীতকালে সূর্যালোকের উপস্থিতি এবং তাপ কম হয়, তাই খাদ্য-শক্তি কম উৎপাদিত হয়।
পক্ষান্তরে শীতের কুয়াশা বা প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে আত্মরক্ষার জন্য গাছ তার উৎপাদিত শক্তি ব্যবহার করে ফেলে।
ফলে গাছের গ্রোথ এবং ফল উৎপাদনের জন্য তার শক্তি কম হয়ে যায়।
পর্যাপ্ত শক্তি না পাওয়ায় ফল বড় হতে পারে না, মারা যায়।
★ এছাড়াও শীতকালে পাউডারি মিলডিউ/ পাতাপোড়া জাতীয় রোগের প্রকোপ বেশি হওয়ার কারনে পাতার সতেজতা নষ্ট হলে সে পাতা খাদ্য তৈরী করতে পারে না।
★ এছাড়াও- মাটি ঠান্ডা হওয়ার ফলে শেকড়ের বৃদ্ধি কম হয়৷ তাই পর্যাপ্ত খাদ্য সংগ্রহে বাধা তৈরী হয়।
★ শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় না। তাই পানির অভাবে গাছ মাটি থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি নিতে পারে না।
★ অন্য সময় বিকেলে ফুল ফুটলেও শীতকালে সন্ধার সময় ফুল ফুটতে দেখা যায়। সারা রাতে Pollen Beetle পোকা ফুলের রেনুগুলো নষ্ট করে দেয়।
কুয়াশার কারনে সকাল হতে হতে ফুলের পাপড়ির উজ্জ্বলতাও নষ্ট হয়ে যায়। এ সময় মৌমাছি সরিষা, মিষ্টি কুমড়া সহ আকর্ষনীয় ফুলের মধু খেয়ে বেড়ায়। তই লাউ গাছে পরাগায়ণ হয় না।
তাই শীতকালে গাছ টিকিয়ে রাখা এবং ফলন বৃদ্ধির জন্য কিছু এক্সট্রা ট্রিটমেন্ট এর প্রয়োজন।
১. রোগাক্রান্ত পাতা ও ফল ছাটাইঃ-
রোগাক্রান্ত বয়স্ক পাতা গাছের জন্য খাদ্য তৈরী করতে পারে না, বরং চাপ সৃষ্টির মাধ্যেমে আলো-বাতাস রোধ করে গাছের ক্ষতি করে।
তাই বয়স্ক পাতা ছাটাই করতে হবে।
গাছে ঝুলে থাকা বিকৃত এবং মৃতপ্রায় ফলগুলো গাছের খাদ্য-শক্তি নষ্ট করে থাকে। তাই এগুলো নিয়মিত ছাটাই করতে হবে।
নিচে পুরোনো আগাছা থাকলে প্যরাকোয়াট দিয়ে দমন করা যেতে পারে।
২. ছত্রাকনাষক প্রয়োগঃ-
শীতের কুয়াশা এবং বিরূপ আবহাওয়া থেকে গাছকে রক্ষা করার জন্য Protective fungicide যেমনঃ- মেনকোজেব, প্রপিনেব অথবা মেনকোজেব+মেটালেক্সিল/সাইমোক্সানিল বা এ জাতীয় ছত্রাকনাষক প্রতি সপ্তাহে ১ বার স্প্রে করতে হবে। মাঝে মাঝে নাটিভো/ক্যবরিওটপ দিলে উত্তম হবে। এতে পাতা সতেজ থাকবে এবং গাছের খাদ্য তৈরী নিশ্চিত হবে।
যে সকল ছত্রাকনাষক গ্রোথ কমিয়ে দেয় এ সকল ছত্রাকনাষক (যেমন- প্রপিকোনাজল, ডাইফেনোকনাজল ইত্যাদি) প্রয়োগ করা যাবে না, তবে গোড়া/কান্ডে পচন সমস্যা হলে গোড়ায় কার্বেন্ডাজিম স্প্রে করা যাবে।
৩. সেচ ও সার প্রয়োগঃ-
এ সময়ে বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে। তাই পানি সেচের বিকল্প নাই৷
ফসফেট, পটাশ, জিপসাম, ইউরিয়া সহ অন্যান্য সকল প্রকার গৌন পুষ্টি উপাদান যেমনঃ- বোরণ, ম্যগনেশিয়াম, সালফার, জিংক ইত্যাদি প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সারের সাথে ফ্লোরা প্রয়োগ করে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়।
শেকড় বৃদ্ধির জন্য ভালো কোম্পানির রুট হরমন প্রয়োগ করা যেতে পারে, যেমন- ন্যশনাল এগ্রিকেয়ার এর “রুটন” হতে পারে৷
এছাড়াও জৈব সার সাধ্য অনুযায়ী দিতে হবে।
(গরম/বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে জমি উর্বর হয়ে যায়, তাই সে সময় সার কম হলেও হয়ে যায়।)
* যে সকল সার বা অনুখাদ্য গাছের গ্রোথ বৃদ্ধি করে শীতকালে সে সকল সারের অনুপাত একটু বেশি রাখতে হবে।
৪. কীটনাষক ও হরমন প্রয়োগঃ-
শীতকালে সাধারণত পোকা-মাকড় খুব কম থাকে, তবে গরমের শুরুতে মাছি পোকার আক্রমণ খুব বেড়ে যায়। পুরুষ ফুলের পরাগধানীতে কীড়া জন্মে যেগুলো রেণু নষ্ট করে। এর জন্য ১০ ইসি, ২.৫ ইসি, ৫৫ ইসি, সবিক্রণ, এসাটাফ, টিডো ইত্যাদি ভালো কাজ করে।
এ সময় গাছ ও ফলের গ্রোথ বৃদ্ধির জন্য হরমন হিসেবে ফ্লোরা, লিটোসেন, প্রটোজিম, মিরাকুলান, নাফা ইত্যাদি স্প্রে করলে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়।
অনুখাদ্য হিসেবে চিলেটেড জিংক, সালফার, বোরণ স্প্রে করা যায়।
ফল দ্রুত বড় করার জন্য “নুট্রাফস-২৪” ব্যবহার করে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
* গাছ ও ফলের গ্রোথ বাড়াতে অনেকে জিএ-৩ স্প্রে করে থাকে৷
৫. ফুল ফোটার পর (সন্ধার সময়) হাত পরাগায়ণ করতে হবে।
এ সকল বিষয়গুলো ফলো করলে লাউ বা কুমড়াজাতীয় সবজির ফলন অনেকাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব।
সাধারণত প্রতিকূল আবহাওয়াতে কৃষকরা হাল ছেড়ে দেয়। তাই এ সময় উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বৃদ্ধি পায়৷ আমরা এ সময়ে সঠিকভাবে পরিশ্রম করলে ব্যপক লাভবান হওয়া সম্ভব হবে।
লেখক-
মোঃ মহিউদ্দিন অনিক
রাজশাহী
আমার লাউ গাছে মোটামুটি ভালো লাউ ধরছিল কিন্তু এখন হঠাৎ লাউ বড় হচ্ছে না এবং নতুন করে স্ত্রী ফুলও আসতেছেনা। এর কারণ কি হতে পারে এবং এর সমাধান কি?
আমার লাউ গাছে মোটামুটি ভালো লাউ ধরছিল কিন্তু এখন হঠাৎ লাউ বড় হচ্ছে না এবং নতুন করে স্ত্রী ফুলও আসতেছেনা। এর কারণ কি হতে পারে এবং এর সমাধান কি?