কৃষি চাষাবাদ করেন অথচ “ইমিডাক্লোপ্রিড” গ্রুপের কীটনাষক ব্যবহার করেন নাই, এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। তাই আজ “ইমিডাক্লোপ্রিড” বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য সহজভাবে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। আশা করি এই তথ্যগুলো আপনাদের ব্যবহারিক ক্ষেত্রে খুবই কাজে লাগবে। আমাদের কৃষিক্ষেত্রে যতগুলো ক্ষতিকর পোকা-মাকড় আছে, সেগুলোকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়।
১. শোষক পোকা – যারা গাছের রস খেয়ে বেচে থাকে।
২. কুরে খাওয়া পোকা- যারা গাছ, পাতা, ফল, ফুল ছিদ্র করে বা চিবিয়ে খায়।
ইমিডাক্লোপ্রিড সকল প্রকার শোষক পোকা দমনে খুব কার্যকরী। তাই এই একটি মাত্র কীটনাষক দিয়ে আপনি কৃষিক্ষেত্রের প্রায় অর্ধেক পোকার ট্রিটমেন্ট করতে পারবেন। তাই এর বিষয়ে একটু জেনে রাখা খুব জরুরী। ১৯৯৯ সালের হিসাবে, ইমিডাক্লোপ্রিড ছিলো বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত কীটনাষক।
ইমিডাক্লোপ্রিড কীভাবে কাজ করে?
কীভাবে_কাজ_করে? (Mode of action) এর অনেক কয়টি গুন আছে। এটি বিভিন্নভাবে কাজ করে থাকে। যেমন:- ১. প্রবাহমানঃ- ইমিডাক্লোপ্রিড একটি প্রবাহমান বা অন্তর্বাহী ক্রিয়া সম্পন্ন কীটনাশক তাই স্প্রে করার অল্প সময়ের মধ্যেই ইহা গাছের ভিতরে প্রবেশ করে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং গাছের রসের সাথে মিশে সম্পূর্ণ গাছটি বিষাক্ত করে তোলে। ২. স্পর্শকঃ- স্পর্শ ক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় কীট-পতঙ্গের শরীরে সরাসরি স্পর্শ করলে বিষক্রিয়া ঘটে। ৩. পাকস্থলীয়ঃ- ইহা পাকস্থলীয় ক্রিয়া সম্পন্ন কীটনাশক। তাই স্প্রে করা পাতা, ডগা ইত্যাদি থেকে রস খেলে পোকার শরীরে বিষক্রিয়া ঘটে৷ ৪. ট্রান্সলেমিনারঃ- এটি ট্রান্সলেমিনার গুনসম্পন্ন কীটনাশক তাই পাতার উপরের স্তরে পড়লে তা পাতার এপিডার্মিস ভেদ করে পাতার নিচের স্তরে পৌঁছাতে সক্ষম। তাই যে সকল পোকা পাতার নিচে লুকিয়ে থেকে রস চুষে খায়, তাদের শরীরেও বিষক্রিয়া ঘটে।
প্রয়োগ পদ্ধতি
সাধারণত স্প্রে করার মাধ্যমে এটি গাছে প্রয়োগ করা হয়, তবে এটি মাটিতেও প্রয়োগ করা যায়। এর ফলে মাটিতে অবস্থানরত পোকা মারা যায় এবং শেকড়ের মাধ্যমে এটি গাছে প্রবেশ করে গাছও বিষাক্ত হয়ে যায়। এছাড়াও এটি বীজ ড্রেসিং এর কাজেও ব্যবহার হয়ে থাকে।
-
Product on saleনাইট্রো ৫০৫ ইসি Nitro 505 EC chlorpyrifos and cypermethrin80.00৳ – 160.00৳
-
স্কয়ার বোরন সার Square boron fertilizer (৫০০ গ্রাম)255.00৳
-
Product on saleম্যানসার (ছত্রাকনাশক) Mancer 75 Wp-PesticidesOriginal price was: 180.00৳ .140.00৳ Current price is: 140.00৳ .
-
Product on saleকীটনাশক AC Mix 55 EC- এসিমিক্স ৫৫ ই সি90.00৳ – 775.00৳
-
Product on saleছত্রাকনাশক: টাইকোজেব ৮০ ডব্লিউ পি (ম্যানকোজেব) ১০০ গ্রাম প্যাকOriginal price was: 125.00৳ .115.00৳ Current price is: 115.00৳ .
ইমিডাক্লোপ্রিড কীটনাশক পোকার শরীরে কীভাবে কাজ করে?
ইমিডাক্লোপ্রিড হচ্ছে নিওনিকোটিনয়েড গ্রুপের কীটনাষক যা কীট-পতঙ্গের Nerve বা স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে। এটি কীট-পতঙ্গের শরীরে স্পর্শ করলে বা তারা চুষে বা কুরে খেলে তাদের শরীরে বিষক্রিয়া শুরু হয়। ইমিডাক্লোপ্রিড স্নায়ুর স্বাভাবিক সংকেত পাঠানোর ক্ষমতাকে ব্যাহত করে এবং স্নায়ুতন্ত্র যেভাবে কাজ করা উচিত সেভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এর ফলে কীট-পতঙ্গের প্রতিটি অঙ্গের কাজ করার ক্ষমতা লোপ পায় এবং অসাড় হয়ে মারা যায়।
কোন কোন পেকা দমন করে?
ইমিডাক্লোপ্রিড অসংখ্য অগুনিত পোকা দমন করে, যার আলোচনা সম্ভব নয়, তবে অল্প কিছু গোত্র ও পরিচিত পোকা সম্পর্কে আলোচনা না করলেই নয়।
এফিড (Aphid)
এরা ক্ষুদ্র প্রকৃতির শোষক পোকা, গাছের রস খেয়ে বেচে থাকে তাই এদের গাছের উকুনও বলা যেতে পারে। সাদা মাছি, সবুজ মাছি, কালো মাছি নামেও পরিচিত। এদের ৪,৪০০ টি প্রজাতি রয়েছে, তার মধ্যে ২৫০ টি প্রজাতি কৃষি ক্ষেত্রের জন্য খুব ভয়ানক বালাই। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় এদের আক্রমন বেশি হয়। #থ্রিপস_পোকাঃ- উকুনের মতো ক্ষুদ্র পোকা, সকল ধরনের সবজি, মাঠ ফসল ও মশলা জাতীয় ফসলে আক্রমন করে।
জ্যাসিডঃ জ্যাসিড বা শ্যামা পোকা দমনেও এটি ভালো কাজ করে।
কারেন্ট_পোকাঃ- এটি প্রবাহমান গুনসম্পন্ন হওয়ায় কারেন্ট পোকাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
ফলের_মাছি_পোকাঃ- কুমড়াজাতীয় সবজি এবং অন্যান্য ফলের মাছি পোকা যেহেতু গাছের রস খেয়ে বেচে থাকে, তাই তাদের দমনের জন্যও এটি কাজ করে।
জাব_পোকা হচ্ছে আমাদের সকলের একটি পরিচিত পোকা। এটি দমনে ইমিডাক্লোপ্রিড এর তুলনা নাই৷
এছাড়াও হপার, মিলিবাগ, রাইস বোরার্স, প্ল্যান্টপার্পারস, বিটল সহ চেনা-অচেনা বহু পোকা দমনে ইমিডাক্লোরপ্রিড মাহের। সাধারণত এ সকল শোষক পোকা দৈনিক তাদের শরীরের ওজনের ৩ থেকে ২০ গুণ রস শোষণ করে। কেনটা আবার ৮০ গুন পর্যন্তও রস শোষন করতে পারে। গাছের শরীর থেকে সমস্ত খাদ্য ও রস চুষে নেয়াতে গাছ একেবারে দুর্বল হয়ে যায়। তাই এদের ক্ষুদ্র ভেবে হালকাভাবে নেয়া মোটেও উচিৎ নয়। এদের বাচ্চা বা ডিমও (নিম্ফ) ক্ষতিকর। ভাইরাস এবং রোগ ছড়ানোর জন্য মূলত এই সকল শোষক পোকাই দায়ী। আর এদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ইমিডাক্লোপ্রিড হচ্ছে খুবই সস্তা এবং কার্যকরী একটি অষুধ। এটি ল্যাদা জাতীয় পোকা, ফল ছিদ্রকারী পোকা সহ অন্যান্য কুরে খাওয়া পোকা দমনে সফলভাবে কাজ করে না। তাই এগুলো দমনে ইমিডাক্লোপ্রিড উপযুক্ত নয়।
ক্রস প্রতিক্রিয়াঃ-
ইমিডাক্লোপ্রিড খুবই শান্ত প্রকৃতির একটি অষুধ। পানিতে মিক্স করলে তা ঘোলাটে করে না। এমন কি অন্যান্য কীটনাষকের সাথে মিক্স করলেও এটি কোন খারাপ বিক্রিয়া করে না। তাই অর্গানোফসফেট (টাফগরজাতীয়), পাইরিথ্রয়েড (সাইপারমেথ্রিনজাতীয়), কার্বামেট (কার্বোসালফানজাতীয়) কীটনাষকের সাথে মিক্স করে স্প্রে করলে বিপরীত কোন ক্রিয়া করে না। তাই এটা এ জাতীয় সকল কীটনাষকের সাথে মিক্স করে স্প্রে করা যায়।]
বিষাক্ততাঃ-
ইমিডাক্লোপ্রিড খুব দ্রুত কাজ করলেও এটি মাটি এবং পানি খুব কম দূষিত করে। মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জন্য এর বিষাক্ততা খুব কম। কীট-পতঙ্গ ও অন্যান্য অমেরুদন্ডী প্রাণীদের জন্য এটি খুব বিষাক্ত। মৌমাছির জন্য এটি খুব ক্ষতিকর।
বানিজ্যিক নামঃ-
যেহেতু এটি বহুল ব্যবহৃত একটি কীটনাষক, তাই বহু কোম্পানি থেকে বিভিন্ন নামে এটি মার্কেটে পাওয়া যায়। নিচে ব্যপক ব্যবহৃত কিছু বানিজ্যিক নাম দেয়া হলো।
১. টিডো/ টিডো প্লাস – এসি আই
২. ইমিটাফ – অটো ক্রুপ কেয়ার
৩. এডমায়ার/কনফিডর – বায়ার
৪. কিংক্লোরপ্রিড/ফোটিক – রেভেন এগ্রো
৫. জাদীদ – ইনতেফা
৬. মুক্তি – ইয়ন এগ্রো
৭. ক্যানোপি – মিমপেক্স
৮. লিমিডোর – দি লিমিট এগ্রো
৯. প্রিমিয়ার/ক্যাপচার – হেকেম বাংলাদেশ
১০. আমাডর – আমানা এগ্রো
১১. সাপ্টা – গ্লোবাল এগ্রোভেট
১২. ডাইমেগ্রো- সী ট্রে
১৩. পুতিন – এগ্রি সোর্স লিমিটেড
১৪. গেইন – ম্যাকডোনাল্ড
১৫. কৃষক বন্ধু – জেনেটিকা।
প্রয়োগ মাত্রাঃ-
ইমিডাক্লোরপ্রিড 20 SL লিকুইড সাধারণত সবজি ও মাঠ ফসলে প্রতি লিটার পানিতে 0.5 ml অনুপাতে ব্যবহার করার জন্য সাজেস্ট করা হয়ে থাকে। তবে অবস্থাভেদে বিভিন্ন ফল গাছ অথবা অন্যান্য ট্রিটমেন্টে বিভিন্ন মাত্রায় সুপারিশ করা হয়ে থাকে। ইমিডাক্লোরপ্রিড 70wdg এর ২ গ্রাম = ৭ মিলি লিকুইড ইমিডাক্লোরপ্রিড 20sl এর সমপরিমান। তাই এটি ১৪ লিটার পানিতে ব্যবহার করা যায়।
বিঃদ্রঃ- পোস্টটি কিছুটা নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এবং কিছুটা (গবেষণামূলক তথ্যগুলো) নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে নেয়া হয়েছে। কোথাও যদি ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে, তাহলে জ্ঞাত করানোর জন্য অনুরোধ রইলো৷ মনযোগ দিয়ে পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
লেখক
মোঃ মহিউদ্দিন অনিক
রাজশাহী
আমার ছাদে বাগান আছে, মোটামুটি বিভিন্ন ফল ও সব্জীর গাছ আছে। কিন্তু ফল ও তরকারি একদম কম হয়। দোকান থেকে অনেক রকমের কীটনাশক, ছত্রাক নাশক(তাদের পরামর্শে) এনে ব্যবহার করি, কাজ হয় না। তরকারি জাতীয় গাছগুলি একটু বেড়ে ওঠার পর আর বাড়তে চায়না। পাতাগুলো কুকরে যায়, হলুদ হয়ে মরে যায়, মোজাইক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গাছের সকল পাতা হলুদ হয়ে পঁচে মরে যায়। বোরন, MgSo4, H2O2, ম্যককোজব, ইমিডাক্লোপিড, টাফগর ব্যবহার করেছি। কিন্ত কাকর, ঝিঙ্গে, মিষ্টি কুমার, শসা,লাউ গাছের বেহাল দশা। কেন? ঢেঁড়স, পুই শাক, পাট শাক, কলমি শাক ভালই হয় তাহলে ঐগুলি কেন হবে না? দয়া করে জানাবেন।
অনেক কিছু জানতে পারলাম।
ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনাকে
আমি মাইক্রো টাচ নিতে চাই একটা কোথায় পাবো